করোনা ভাইরাস না থাকায় গাজীপুরের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে ছাড়পত্র পেয়ে ১৬দিন পর বাড়ি ফিরেছেন নারী ও শিশুসহ ইতালী ফেরত ৩৬জন প্রবাসী। সোমবার দুপুরে তারা গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ থেকে মুক্ত হয়ে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে বিদেশ ফেরতদের সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার এটিই প্রথম ঘটনা। এছাড়াও আগামী ১এপ্রিল কাপাসিয়ার পাবুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অপর ৭জনকে ছাড়পত্র দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতাল থেকে ইতালী ফেরত নারী ও শিশুসহ ৩৬জন প্রবাসীকে ছাড়পত্র দিয়ে সোমবার বেলা সোয়া ১১ টার দিকে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। তারা এ হাসপাতালে ১৬দিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। কোয়ারেন্টাইনে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে এ ৩৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। তাই তাদেরকে ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়। এদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ মিরপুরের রূপনগর এলাকার এক পরিবারের ৬সদস্য রয়েছেন। এখান থেকে এলাকায় গিয়ে তারা যাতে কোন হয়রানীর শিকার না হন সেজন্য গাজীপুরের এ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র ত্যাগের পূর্বে সিভিল সার্জনের ছাড়পত্র ছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এখন থেকে তারা বাড়ি গিয়ে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী চলাফিরা করবেন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফেরার এটিই প্রথম ঘটনা।

মেঘডুবির ওই হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. জামাল উদ্দিন জানান, সোমবার সকালেই কোয়ারেন্টাইনে থাকা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ছাড়পত্র পেয়ে তারা বেলা সোয়া ১১টার দিকে ওই কেন্দ্র ত্যাগ করতে শুরু করেন। হাসপাতালের গেইটে তাদের স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন। এসময় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মশিউর রহমান, জিএমপি’র গাছা জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফ উল ইসলামসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

মেঘডুবি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র ত্যাগকালে ইতালী ফেরত মিরপুরের রূপনগর এলাকার মতিন বেপারী জানান, গত ১৪ মার্চ স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে ইতালী থেকে ঢাকা বিমান বন্দরে আসেন। সেখান থেকে এ কেন্দ্র অন্যদের সঙ্গে পরিবারের সবাইকে এ কেন্দ্রে আনা হয়। এখানে কোয়ারেন্টাইনে থেকে করোনা ভাইরাস না থাকার নিশ্চয়তা পেয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এটি সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ। এজন্য আমরা বর্তমান সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।

জেলা প্রশাসক জানান, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ইতালী ফেরত ৪৪জন বাংলাদেশী প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তঃর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে ৮জনের দেহে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তাদেরকে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দু’দফায় (১৫ মার্চ ৪জন ও ১৬ মার্চ ৪জন) রাজধানী উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অধিকতর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওই ৮জনের মধ্যে একজনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আইসোলেশনে রেখে অপর ৭জনকে পুনঃরায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য ১৮মার্চ ঢাকা থেকে গাজীপুরে কাপাসিয়ার পাবুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পর আগামী ১ এপ্রিল তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। পাবুরের এ কেন্দ্রে ওই ৭জন ছাড়াও পরবর্তীতে আসা আরো ২জন বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এ দু’জনের কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ পূর্ণ হলে পরবর্তীতে তাদেরকেও ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এছাড়াও গাজীপুর কারাগারে একজন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসব ব্যক্তিদের নিয়মিত খাবার, ফল ও স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, গত ১৪ মার্চ রাতে ঢাকার বিমান বন্দর থেকে গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে ইতালী ফেরত ৪৪ জনকে আনা হয়। এদের মধ্যে ৮জনের দেহে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তাদেরকে রাজধানী উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হলে একজনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি যেহেতু গাজীপুরের মেঘডুবি মা ও শিশু হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আনা অন্যদের সংস্পর্শে ছিলেন। তাই এ হাসপাতালে অবস্থানরত বাকী ৩৬জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় এবং করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব না পাওয়ায় এদেরকে সোমবার ছাড়পত্র দিয়ে তাদের গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো অপর ৮জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রেখে বাকি ৭জনকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য গত ১৮মার্চ গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ কেন্দ্রে আরো ২জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তারা আরো কিছুদিন এ কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কিছু করার নেই।

তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত জেলার কারো দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায় নি। তবে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সোমবার পর্যন্ত জেলায় বিদেশ ফেরত সর্বশেষ ৪৪১ জনসহ মোট এক হাজার ৮৯৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ১১জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে (আইসোলেশনে ১জনসহ) রাখা হয়। এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৮৯০জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাস যখন আতংক সৃষ্টি করেছে ঠিক তখনই করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে গাজীপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কোয়ারেন্টাইনের জন্য গাজীপুরে মেঘডুবি ও পাবুরের ওই দু’স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও পূবাইল এলাকার ম্যাটসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় ১০/১৫টি করে বেড সম্মিলিত ইনস্টিটিউশন ফিক্সড করা হয়েছে। যদি আরো লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হয়, তাহলে সেসব গুলোতে আমরা কোয়ারেন্টাইন করবো। প্রতিটি উপজেলায় যেসব ক্লিনিকগুলো রয়েছে সেখানে ৩/৪টি বেড সমৃদ্ধ একেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালেও আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে আইসোলেশন কর্ণারও খোলা হয়েছে। যেখানে সন্দেহভাজন রোগীরা যাবেন। যাদের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর আছে তারা সেখানে আলাদাভাবে যাবে। এভাবে আমাদের কোয়ারেন্টাইনের সকল প্রস্তুতি নেওয়া আছে।