গাজীপুরের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে ইতালী ফেরত আরো ৭জনকে দ্বিতীয় দফায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস শনাক্ত না হওয়ায় বুধবার সকালে তারা কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মুক্ত হয়ে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। দেশে করোনা প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে বিদেশ ফেরতদের সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার এটি (কাপাসিয়ার) দ্বিতীয় ঘটনা বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম। এর আগে গত সোমবার (৩০মার্চ) গাজীপুর মহানগরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ থেকে ইতালী ফেরত অপর ৩৬জন ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ‘পাবুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ হাসপাতাল থেকে ইতালী ফেরত ৭জনকে ছাড়পত্র দিয়ে বুধবার সকাল ৯টার দিকে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। তারা এ হাসপাতালে ১৪দিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এখান থেকে এলাকায় গিয়ে তারা যাতে কোন হয়রানীর শিকার না হন সেজন্য গাজীপুরের এ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র ত্যাগের পূর্বে সিভিল সার্জনের ছাড়পত্র ছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এখন থেকে তারা বাড়ি গিয়ে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী চলাফিরা করবেন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফেরার এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে সোমবার (৩০মার্চ) গাজীপুর মহানগরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ থেকে ইতালী ফেরত অপর ৩৬জন ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, বুধবার ছাড়পত্র পাওয়া এ ৭জনসহ ইতালী ফেরত মোট ৪৪ জন বাংলাদেশী প্রবাসীকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তঃর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। দেহে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তাদের মধ্যে ৮জনকে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দু’দফায় (১৫ মার্চ ৪জন ও ১৬ মার্চ ৪জন) রাজধানী উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অধিকতর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওই ৮জনের মধ্যে একজনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আইসোলেশনে রেখে অপর ৭জনকে পুনঃরায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য গত ১৮মার্চ ঢাকা থেকে গাজীপুরে কাপাসিয়ার পাবুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিটি মেঘডুবি মা ও শিশু হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আনা অন্যদের সংস্পর্শে ছিলেন। তাই ওই ব্যক্তিকে ঢাকায় আইসোলেশনে রেখে অবশিষ্ট ৪৩জনকে গাজীপুরের পৃথক দু’কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে রাখা হয়। সেখানে কোয়ারেন্টাইনে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে তাদের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। তাই কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষে তাদেরকে ছাড়পত্র দিয়ে গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, পাবুরের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরবর্তীতে আসা আরো ২জন বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এ দু’জনের কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ পূর্ণ হলে পরবর্তীতে তাদেরকেও ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এছাড়াও গাজীপুর কারাগারে একজন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসব ব্যক্তিদের নিয়মিত খাবার, ফল ও স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত জেলার কারো দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায় নি। তবে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বুধবার পর্যন্ত জেলায় বিদেশ ফেরতসহ মোট দু’হাজার ৩৩৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৪জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে (আইসোলেশনে ১জনসহ) রাখা হয়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এক হাজার ৯৮৭জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালাম সরকার জানান, কাপাসিয়ায় পাবুরের এ প্রাতিষ্ঠাণিক কেন্দ্রে মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, শরীয়তপুর ও কুমিল্লা জেলার একজন করে এবং ঢাকা জেলার ৩ জনসহ মোট ৭জন ইতালী ফেরত প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ছাড়পত্র পাওয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অর্থায়নে পৃথকভাবে তাদেরকে নিজ বাড়ীতে পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এ প্রাতিষ্ঠাণিক কেন্দ্রে আরো দু’জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এদের মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের একজন কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে ছবি তোলার সময় কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন। অপরজন কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ এলাকার। কয়েকদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরার পর স্বজনরা তাকে বাড়ীতে রাখতে রাজি না হওয়ায় তিনি স্বেচ্ছায় এখানে কোয়ারেন্টাইনে আসেন। আগামী ৪ এপ্রিল তাদেরকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।

পাবুর কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে প্রবাসীদের বিদায় জানানোর সময় কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ ইসমত আরা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালাম,উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রহিমসহ প্রমূখ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।