নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় শরীফ হোসেন (৩০) নামে এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। দিনেদুপুরে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার (১ এপ্রিল) বেলা এগারোটার দিকে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম দেওভোগের অদর্শনগর এলাকায় এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ মেতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আদর্শনগর এলাকার আলাল মাতবরের ছেলে শরীফ হোসেন প্রায় পাচঁ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। গত ছয় সাত মাস আগে দেশে ফিরে এসে এলাকাতেই দোকান ভাড়া নিয়ে বৃষ্টি ইলেকট্রিক, হার্ডও্যার ও ফার্নিচারের ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে তিনি বিয়েও করেন।

নিগত শরীফের বাবা আলাল মাতবর জানান, গত কয়েকদিন আগে আদর্শনগর এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের নেতা শাকিল ও লালনসহ কয়েকজন বখাটে যুবক শরীফ হোসেনের ইলেট্রনিক্স এন্ড ফার্নিচারের দোকানের সামনে নিয়মিত আড্ডা দেয়াসহ মাদকদ্রব্য সেবন করতো। শরীফ তার দোকানের সামনে ওই বখাটে যুবকদের আড্ডা দিতে নিষেধ করলে এ নিয়ে তাদের সাথে কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম সাইফুল্লাহ বাদল স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে দুইপক্ষকে ডেকে বিচার শালিশের মাধ্যমে মিমাংসা করে দিলেও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তা মেনে নেয়নি। শরীফের উপর তারা প্রতিশোধ নেবার সুযোগ খুঁজতে থাকে। বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য শরীফ হোসেনকে মোবাইল ফোনে বাসা থেকে ডেকে এনে একটি রিক্সার গ্যারেজের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে শাকিল ও লালনসহ কিশোর গ্যাংয়ের পঁচিশ থেকে ত্রিশজনের একটি দল অতর্কিতভাবে শরীফের উপর হামলা করে। তাকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়।

পরে স্থানীয়রা শরীফকে আশংকাজনক অবস্থায় সদরের জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত শরীফের পরিবারের স্বজনরা। বিষয়টি জানতে পেরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদি ইমরান সিদ্দিকী ও ফতুল্লা থানার ওসি আসলাম হোসেনসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটির বাড়ির সিসি টিভির ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেন।

নিহত শরীফের মা রহিমা বগেম বলেন, আমার ছেলের কোন দোষ ছিলো না। অন্যায়ভাবে তাকে খুন করেছে এলাকার কিশোর গ্যায়য়ের নেতা শাকিলের বখাটে দল। এই খুনের ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান পুত্রহারা মা রহিমা বেগম।

এ ব্যাপারে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে বিচার সালিশ করে আমি দুইপক্ষের ঝগড়া মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। তারপরেও এইভাবে হামলা করে একটা হত্যাকাণ্ড ঘটাবে এটা মেনে নেয়া যায় না। অপরাধী যে-ই হোক না কেন পুলিশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এদিকে পুলিশের উদ্ধার করা সিসি টিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের পঁচিশ থেকে ত্রিশজনের সদস্যরা রামদা, ছোঁড়া, লোহার রড ও লাঠিসোঠা নিয়ে রাস্তা দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। এর ১ মিনিটের মধ্যেই আশেপাশের লোকজন দৌড়ে ছুটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আবার দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, নিহত শরীফের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডেড জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদি ইমনার সিদ্দিকী বলেন, সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা হত্যাকারিদের শনাক্ত করেছি। এই হত্যাকেণ্ডে যারা যারা জড়িত রয়েছে তাদের সবাইকে আমরা দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম গ্রেপ্তার অভিযানে বের হয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি।