শত তৎপরতাতেও বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া নোবেল করোনা ভাইরাসকে কোনোভাবেই পরাস্ত করতে পারছে না মানুষ। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রথম চীনে প্রাদুর্ভাব ঘটিয়ে মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ ভাইরাস এখন গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ও মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় সব দেশকে আরও আগ্রাসী

হয়ে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় ফেস মাস্কের ব্যবহারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য নির্দেশনায় পরিবর্তন আনার আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

গত বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচও প্রধান ডা. টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়েসুস অচিরেই আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এটা এখনো নতুন একটি ভাইরাস। এর বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি। যেহেতু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন তথ্য আসছে, এর ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের পরামর্শও বদল ফেলব।’ সম্প্রতি ডব্লিউএইচও তাদের বিবৃতিতে শুধু রোগী ও তাদের শুশ্রƒষায় নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া সবার মাস্ক পড়া জরুরি নয় বলে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু বুধবারের ব্রিফিংয়ে সংস্থাটি অচিরেই সংক্রমণ রোধে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়।

হংকংয়ের নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী, সুস্থ মানুষেরও মাস্ক পরা প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। হংকংয়ের এ গবেষণার প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল তাদের দিকনির্দেশনা পরিবর্তন করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেভিড হেইমান এ প্যানেলের সভাপতিত্ব করছেন। এর আগে তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, একজন সুস্থ মানুষের মাস্ক পরার পেছনে কোনো নির্দিষ্ট সুবিধা আছে বলে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসলে মাস্ক করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সক্ষম কিনা তা এখনো সুস্পষ্ট নয়।

গত এক সপ্তাহে করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে ডা. গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘এই যুদ্ধে লড়তে এবং প্রতিটি মানুষের যাতে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হয়, সে ব্যাপারে সব দেশকে সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ করতে হবে।’ উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে, তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ঋণ মওকুফের আহ্বান জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রাত পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ এবং মারা গেছে ৪৯ হাজার ১৯৯ জন। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকে রাত অবধি মারা গেছে ২ হাজারের বেশি মানুষ; সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২ লাখ ৩ হাজার ২৪৭ জন। এদিনও আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ও মৃতের সংখ্যায় এগিয়ে ছিল ইউরোপের দেশগুলো। গতকাল ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে স্পেনে সর্বোচ্চ ৬১৬, যুক্তরাজ্যে ৫৬৯, বেলজিয়ামে ১৮৩, নেদারল্যান্ডসে ১৬৬, সুইডেনে ৪৩, জার্মানিতে ৩১, ডেনমার্কে ১৯, পর্তুগালে ২২, সুইজারল্যান্ডে ১৭, অস্ট্রিয়াতে ১২ জনসহ আরও কয়েকটি দেশে প্রাণহানি হয়েছে।

এদিকে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যানুযায়ী, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ গেছে ৮৮৪ জনের, যা করোনা ভাইরাসে দেশটিতে মৃত্যুর রেকর্ড। এর মধ্যে ৬ সপ্তাহের এক শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম এই ধনী দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সংকটময় মুহূর্তেও দেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, মাস্ক, ভেন্টিলেটরসহ নানা জিনিসের প্রচ- অভাব দেখা দিয়েছে, যা মার্কিনিদের জন্য জাতীয় লজ্জা। তবে মার্কিন সরকার জানিয়েছে, তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য অতিরিক্ত ১৬০০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।