করোনা ভাইরাস নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চলছে অঘোষিত লকডাউন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে সরকারের নির্দেশে ঘরে অবস্থান করতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ। ঘরে অবস্থানকারী শ্রীপুরের এসব লোকজনের সেবা দিতে এগিয়ে এসেছে ছাত্রলীগ। তারা ‘আপনার প্রয়োজনে আমরা সবাই’ -এ শ্লোগানে গঠণ করেছে ‘কুইক রেপন্স টিম (কিউআরটি)’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণ। এ সংগঠণটি দিন রাত স্থানীয়দের সেবা দিচ্ছে। একটি ফোন পেলেই তারা অসুস্থ্যদের বাসায় ছুটে যাচ্ছেন চিকিৎসক, এ্যাম্বুলেন্স ও ঔষধ নিয়ে। দিচ্ছেন খাদ্য সহায়তাও। এছাড়া সংগঠণটির হেল্প ডেস্কে ফোন করে অসুস্থ্যরা ঘরে বসেই নিচ্ছেন চিকিৎসকের পরামর্শ। আর এ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদুল আলম রবিন।

টিমের উদ্যোক্তা ও ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল আলম রবিন জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের ভয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চলছে অঘোষিত লকডাউন। সরকারের নির্দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকার প্রায় সব লোকজন ঘরে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। দু’ একটি রিক্সা বা মোটর সাইকেল বাদে কোন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করছে না। এমনকি জরুরী রোগী পরিবহনেও পাওয়া যাচ্ছে না কোন গাড়ি বা এ্যাম্বুলেন্স। করোনা আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও তাদের প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখছেন না। ফলে রোগী নিয়ে স্বজনদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। এসব অসহায় লোকজনের সেবার জন্য গঠণ করা হয়েছে ‘কুইক রেপন্স টিম (কিউআরটি)’। নির্ধারিত ফোনে রোগী বা তার স্বজনদের একটি কল পেলেই এ টিমের সদস্যরা অসুস্থ্যদের বাসায় চিকিৎসক, এ্যাম্বুলেন্স ও ঔষধ নিয়ে ছুটে গিয়ে সেবা দিচ্ছেন। আটজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক এ সংগঠণের পক্ষে অসুস্থ্যদের সেবা দিচ্ছেন। আর যারা ঘরে বসে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চান তারা কল করছেন কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি’র) হেল্প ডেস্কে। এ প্রান্ত হতে চিকিৎসক মোবাইল ফোনে সমস্যা শুনেই ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবেই ঘরে থাকা মানুষদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান, ঔষধ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করছে “কুইক রেসপন্স টিম” (কিউআরটি’র) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বৃহষ্পতিবার দুপুর হতে এ সংগঠণটি কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এছাড়াও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে সরকারের নির্দেশে ঘরে অবস্থান করতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া স্বল্প আয়ের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রায় অর্ধ সহ¯্র কর্মহীন গরীব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতিপরিবারকে দেওয়া খাদ্র সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫কেজি চাল, ৩কেজি আলু, এক কেজি করে ডাল ও পিঁয়াজ, আধা লিটার ভোজ্য তৈল ও আধা কেজি লবন।

টিমের চিকিৎসক রেদোয়ান বলেন, এ সংগঠণের জন্য তিনিসহ আটজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বর্তমানে কাজ করছেন। তারা হলেন- ডা. নাঈম, রেদোয়ান, অংকন, রুহুল আমীন, মুনইমা, শারমিন, কনিকা ও আফসানা। ওই ৮জন চিকিৎসক ২৪ ঘন্টা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিনা খরচে বাসায় ঔষধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অসুস্থ ব্যাক্তিকে শুধু ঔষধের মূল্যটা পরিশোধ করতে হয়। কারণ, ঔষধ কিনে দেওয়ার মতো পুঁজি বা সামর্থ্য ‘কিউআরটি’র নেই। এ সার্ভিস পেয়ে শ্রীপুরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে বলে আমরা মনে করছি। বৃহস্পতিবার থেকে ৮জন চিকিৎসক এ কাজ শুরু করেছেন। মেডিক্যাল পেশার সঙ্গে জড়িত না হলেও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন এ সংগঠনের সঙ্গে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, শ্রীপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান রিমন, গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, মহিদুল ইসলাম শাকিল, শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন খন্দকার ও শাহজাহান। তারা মূলত লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন। এছাড়াও স্থানীয় ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মী এ সংগঠণের সদস্য।

শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া (২নং সিএন্ডবি) এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহজাহান টিটু জানান, গত কয়েকদিন যাবত আমি ঠান্ডা জনিত সর্দি ও কাশির সমস্যায় ভুগছিলাম। সামাজিক যোগাযোগের (ফেসবুক) মাধ্যমে জানতে পারি করোনা পরিস্থিতির এ সময়ে “কুইক রেসপন্স টিম” (কিউআরটি’র) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঘরে থাকা মানুষদের সেবা দিবেন। আমি তখনই ওই টিমের একজন ডাক্তারকে ফোন করে আমার সমস্যার কথা বললে তিনি আমাকে চিকিৎসা পরামর্শ দেন। তাদের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

এ টিমের সদস্য শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান জানান, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই যখন খাদ্য পণ্য দেওয়ায় ব্যস্ত ঠিক তখই আমরা ব্যাতিক্রম এ চিন্তা করে অসহায়, দুস্থ ও ঘরে বসে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমরা তরুণ, আমাদের কাজ করার আগ্রহ আছে, কাজটা করতে চাই। এজন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা।