র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিযুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। একইসঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের আইজির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নতুন আইজি নিয়োগের জন্য দ্রুত সারসংক্ষেপ পাঠাতে মন্ত্রী ও সচিবকে নির্দেশনা দেন। এরপর গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, অতিরিক্ত সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী, যুগ্মসচিব (পুলিশ-১) ড. মো. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, উপসচিব (পুলিশ-১) ধনঞ্জয় কুমার দাসকে নিয়ে এক বৈঠকে সারসংক্ষেপ তৈরি করেন।

মঙ্গলবার দুপুরের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব (পুলিশ-১) ধনঞ্জয় কুমার দাস গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে সারসংক্ষেপ পৌঁছে দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেন। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বলেন, ‘শুনেছি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। সেটি ডিও আকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসবে। এরপরই অর্ডার হবে।’

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘এখনো কিছু আসেনি। তবে, শুনেছি আইজিপি পরিবর্তনের অনুমোদন হয়েছে।’

মেধাবী, সৎ ও চৌকোস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বেনজীর আহমেদের পরিচিতি রয়েছে। সপ্তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। বেনজীর আহমেদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। র‌্যাবের ডিজির দায়িত্ব পালনের আগে প্রায় সাড়ে চার বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিভাগে চিফ অব মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কর্মদক্ষতায় তিনবার জাতিসংঘ শান্তি পদক অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি পুলিশের পেশাগত সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) অর্জন করেন। বেনজীর আহমেদের মতো পেশাদার ও মেধাবী কর্মকর্তা আইজিপি হলে পুলিশে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামের বনেদী পরিবারের সন্তান আবদুল্লাহ আল মামুন এর আগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্বে) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিও ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ এপ্রিল বর্তমান আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর মেয়াদ শেষ যাচ্ছে। তার স্থলে র‌্যাবের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদকে পুলিশের ৩০তম আইজি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমান আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত একটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। আগে থেকেই সৎ, মেধাবী ও পেশাদার কর্মকর্তারা হিসেবে পরিচিতি ছিল তার। তিনি আইজিপি হওয়ার পর থেকে পুলিশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। তার সাহসী নেতৃত্বে পুলিশের দুর্নীতি অনেকটাই কমে এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া পুলিশের বদলি-নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন তিনি। বিশেষ করে ঘুষ ছাড়া পুলিশের কনস্টেবল

নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে তাক লাগিয়ে দেন, যেটি সব মহলে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আইজিপিকে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃপক্ষ। বদলির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার চেয়ে পেশাগত দক্ষতা, মেধার গুরুত্ব দেন জাবেদ পাটোয়ারী। এ ছাড়া অপরাধ করলে যথাযথ শাস্তির মাধ্যমে পুলিশের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে কাজ করেছেন তিনি।

আইজিপি হওয়ার আগে জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৮৬ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে।