করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে চলছে ‘কড়াকড়ি’। সচেতন গ্রামবাসীর উদ্যোগে গ্রামে প্রবেশের সড়কের মুখেই লাল পতাকা উড়িয়ে বাঁশ ও গাছ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। অতি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের কাউকে বাইরে যেতে বা গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে গ্রামবাসীকে নিরাপদ রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে যুবক ও কিশোরসহ স্থানীয়রা।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে। এ গ্রামের সবক’টি প্রবেশমুখে সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে স্থানীয়দের উদ্যোগে। প্রতিবন্ধকতা দেয়া বাঁশে ঝুলিয়ে দেওয়া কাগজ ও কাঠের সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে “গ্রামটা আমাদের, তাই দায়িত্বটাও আমাদের” সহ নানা শ্লোগান। গ্রামের প্রবেশ পথগুলোতে কড়া নজরদারি করতে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। সেখানে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন এলাকার তরুণরা। যারা গ্রামে ঢুকছেন নেওয়া হচ্ছে পরিচয়, জানতে চাওয়া হচ্ছে প্রবেশের কারণ। আগতদের জীবাণুমুক্ত করতে সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে একইভাবে স্থানীয়দের উদ্যোগে শ্রীপৃুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার, মিশনবাড়ী আবাসিক এলাকা, টেপিরবাড়ী-ছাতির বাজার সংযোগ সড়ক, আবদার, শ্রীপুর পৌরসভার উজিলাব, কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া, জাহাঙ্গীরপুর, হয়দেবপুর, যোগিরসিট, গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা, বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন (খাসপাড়া) গ্রামে প্রবেশের সড়কে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে ‘লকডাউন’ করা হয়েছে।

এলাকাবাসি জানান, গ্রামের সেলিম হোসেন, আলী হোসেন, মনির হোসেন, মিলন মিয়া ও জনিসহ গ্রামের অন্যান্য তরুণ বিদ্যার ভিটা ছাত্র-যুব সমাজের উদ্যোগে গ্রাম সুরক্ষায় বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন। স্বেচ্ছায় লক ডাউনের ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই সাধুবাদ জানান এবং নিজ নিজ এলাকায় এ ধরণের উদ্যোগ নিতে থাকেন।

তেলিহাটি মিশনবাড়ী এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, আমরা পালাক্রমে নিজেদের সুরক্ষার জন্য এই দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি, গ্রামে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সচেতন সমাজ এটাকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছে। লকডাউন ও কড়াকড়ি আরোপের পার্থক্যটি না বুঝলেও অনেকের অভিমত সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি এলাকার যুব সমাজ এভাবে এগিয়ে আসলে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

এছাড়া, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ওষুধ ও কাঁচামাল ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সড়কে অল্প কিছু মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোনো গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এটা করে থাকলেও এটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে গ্রামবাসীর এ “কড়াকড়ি” যেন কারোর ভোগান্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সে বিষয়টা লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় জেলা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।