ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার প্রজ্ঞাপন নং ৮৮.০০.০০০০.০৯৪.১৯.০০১.১৯.৩৪১ তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ খ্রি. মোতাবেক আজ বুধবার তাকে ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ১৫ এপ্রিল ২০২০ তারিখ থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। তিনি বর্তমান ইন্সপেক্টর জেনারেল বাংলাদেশ পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ সালে তিনি সরাসরি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন।

একজন দক্ষ, পেশাদার, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক পুলিশ অফিসার জনাব বেনজীর তাঁর বর্ণাঢ্য চাকুরী জীবনে র্যা বের মহাপরিচালক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ও ডিআইজি (ফিন্যান্স এন্ড বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হিসেবে তিনি প্রথম পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে Structural Reform শুরু করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বর্তমান Police Internal Oversight (PIO) ইউনিট তাঁর হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে। Police Internal Oversight (PIO) ইউনিট সৃষ্টির জন্য পুলিশ সদস্যবৃন্দের বেশীরভাগ কার্যকলাপ পর্যবেক্ষনের আওতায় এসেছে। ফলে পুলিশের সামগ্রিক কাজে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক কার্যক্রমে গতিশীলতার সূচনা হয়। প্রকারান্তরে যা পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

তিনি ২০১০-২০১৫ মেয়াদে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই তিনি ডিএমপিতে ব্যাপক Structural Reform শুরু করেন। তিনি ডিএমপি’র প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সূচনা ও সম্পন্ন করেন। তন্মধ্যে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম, পে-রোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার সিস্টেম, রেশন স্টোর সফটওয়ার সিস্টেম, ইনভেন্টরী ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার, সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন এন্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এ সময়ে ডিএমপি’র অবকাঠামো উন্নয়নে এক নতুন যুগের সূত্রপাত হয়। মিরপুর পিওএম এর সামগ্রিক আধুনিকায়ন, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স এর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারন, রাজারবাগ এর প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারন, আধুনিক মিডিয়া সেন্টার স্থাপন, মোবাইল কমান্ড সেন্টার, মোবাইল ওয়াচ টাওয়ার, ডগ স্কোয়াড ও ৮ টি নতুন থানা স্থাপন অন্যতম। তিনিই প্রথম সরকারী কোন অফিসে মিডিয়া সেন্টার স্থাপনের নজীর স্থাপন করেন।

জনগণের সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি আরও সহজতর ও গতিশীল করার লক্ষ্যে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে থানার সংখ্যা, জনবল ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের তদারকী বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। ফলে তাঁর কর্মকালের প্রায় সূচনালগ্নেই তিনি ডিএমপিতে ৪ টি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ৫ টি যুগ্ম কমিশনার, ৭ টি ডিসির পদসহ ৮ টি থানার জনবলের পদ সৃজন করেন।

ডিএমপি কমিশনার হিসেবে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত বিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেন এবং ঢাকা শহর তথা দেশকে এক মারাত্মক বিপর্যয় থেকে মুক্ত করেন। এছাড়াও তিনি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের রাজনৈতিক অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমা সন্ত্রাস অত্যন্ত সাহসিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দমন করেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাস ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক বহুসংখ্যক ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস, বোমা সন্ত্রাস ও পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমন তিনি অত্যন্ত দক্ষতা, সাহসিকতা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে দমন করেন। তিনি নগরবাসীর জন্য ফরমালিন মুক্ত খাদ্যদ্রব্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভেজালবিরোধী এক ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন। এ সম্পর্কে তিনি জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারনার পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা করেন।

পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। তাঁর এ গৃহীত উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য ছিলো সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের অধিকতর সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জনগণকে আরও পুলিশি কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে তিনি প্রথম মহানগরীতে বিট পুলিশিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। এছাড়াও জনগণের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য তিনি চালু করেন ডিএমপি’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ডিএমপি’র অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল। সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ ডিএমপি’র উল্লেখিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এখন তাদের হাতের মুঠোয় পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পরামর্শ, বিভিন্ন সেবা গ্রহনের পদ্ধতি ও জরুরী প্রয়োজনে তাদের করনীয় সম্পর্কে। যা আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের সাথে পুলিশের মধ্যে সেতুবন্ধন ও ইমেজ বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি র্যা বের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। র্যা বের মহাপরিচালক হিসেবে দৃঢ়তার সাথে দায়িত্বপালন করে তিনি সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করেন। যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু বছরের আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। নারায়ণগঞ্জ জেলার ৭ হত্যা মামলাসহ কতিপয় ঘটনার ক্ষেত্রে যখন র্যা বের ভূমিকা ও ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ এবং র্যা ব সদস্যদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম তখন তিনি দৃঢ়তার সাথে সেই নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। তিনি সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা করার পাশাপাশি জনসম্মুখে র্যা বের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২০১৬ সালে হলি আর্টিসান বেকারীতে জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা রাখেন। তিনিই প্রথম মিডিয়াতে কৌশলী ও সাহসী বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ়তার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহবান জানান। তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মিডিয়া তাদের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করেন। যা পরবর্তী সময়ে অপারেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে তিনি কার্যকর ও যুগোপযোগী ভূমিকা রাখেন। ফলে বর্তমানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তাঁর নেতৃত্বে মাদক বিরোধী অভিযানে র্যা বের অর্জন আকাশচুম্বী। র্যা বের মাদক বিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে, আবার অনেকে অভিযানকালীন গুলি বিনিময়ে নিহত হয়েছে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশে বিদেশে সাঁড়া জাগানো ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে একক নেতৃত্ব দিয়েছে র্যা ব। যার নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জনাব বেনজীর। বিভিন্ন ক্ষেত্রে র্যা বের Technological Capacity Building এ তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে র্যা বের Capacity পূর্বের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যা বের আধুনিক মিডিয়া সেন্টার তাঁর হাত ধরেই স্থাপিত হয়েছে।

তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও গুরুত্বপূর্র্ণ দায়িত্বপালন করেছেন। তিনিই উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম যিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন্স এর অধীন মিশন ম্যানেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট সেকশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কসোভো মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।

জনাব বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি এলএলবি ও এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর জ্ঞানস্পৃহা প্রবল। তিনি একজন নিয়মিত পাঠক ও সমসাময়িক বিশ্বে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত থাকেন। লেখাপড়ার প্রতি তাঁর ঐকান্তিক আকর্ষণের কারণেই তিনি সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টি থেকে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমীতে পেশাগত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে তিনি রেক্টর’স মেডেল প্রাপ্তির কৃতিত্ব অর্জন করেন। এছাড়াও চাকুরী জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রেকর্ড সংখ্যক সর্বোচ্চ ছয়বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-কে ভূষিত হয়েছেন। এই দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর তিনবার সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন।

তিনি ১৯৬৩ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি বিবাহিত এবং তিন কন্যা সন্তানের জনক।