দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের এক মাসের মাথায় এসে বুধবার (৮ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশে মোট ২১৮ জন এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১১৯ জনই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। ফলে কোনো এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হলেই ওই এলাকা লকডাউন করছে প্রশাসন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীতে সংক্রমণের শুরুর দিকে ঢাকায় মিরপুরের টোলারবাগে রোগী পাওয়ার পর ওই এলাকা আগেই লকডাউন করা হয়। এরপর একে একে পুরান ঢাকায় খাজে দেওয়ান লেনের ২০০ ভবন, মোহাম্মদপুর এবং আদাবরের ৬টি এলাকা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সামনে, তাজমহল রোড মিনার মসজিদ এলাকা, রাজিয়া সুলতানা রোড, বাবর রোডের একাংশ, বছিলা ও আদাবর এলাকার কয়েকটি বাড়ি ও রাস্তা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানকার একটি রাস্তা লকডাউন করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মহাখালীর আরজত পাড়ার একটি ভবন, বসুন্ধরা এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতালসংলগ্ন এলাকা, বসুন্ধরা ডি ব্লকের রোড-৫, বুয়েট এলাকার একাংশ, ইস্কাটনের দিলু রোডের একাংশ, মিরপুরের টোলারবাগ, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি সড়ক এলাকা, কাজীপাড়ার একটি অংশ, সেন্ট্রাল রোডের কিছু অংশ, সোয়ারীঘাটের কিছু অংশ, মিরপুর-১০-এর ৭ নম্বর রোড, পল্টনের কিছু অংশ, আশকোনার কিছু অংশ, নয়াটোলার একাংশ, সেনপাড়ার একটি অংশ, মীর হাজিরবাগের একাংশ, নন্দীপাড়ার ব্রিজের পাশের এলাকা, মিরপুর সেকশন ১১-এর একটি সড়ক, লালবাগের খাজে দেওয়ান রোডের একটি, ধানমন্ডি-৬-এর একটি অংশ, উত্তর টোলারবাগ, মিরপুর-১৩ ডেসকো কোয়ার্টার, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী, পশ্চিম মানিকনগর, নারিন্দার কিছু এলাকা, গ্রিন লাইফ হাসপাতাল এলাকা, ইসলামপুরের একাংশ লকডাউন রয়েছে। এসব এলাকা পুলিশি পাহারায় রয়েছে। দিনরাতে কাউকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এলাকায় সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, লকডাউনের আগে কেউ বাসার বাইরে থাকলে তিনি ভেতরে যেতে পারবেন। কিন্তু কেউ বের হতে পারবেন না। কেউ বের হতে চাইলে তাকে অনুমতি নিয়ে বের হতে হবে।

প্রসঙ্গত, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনা রোগী শনাক্ত হলেই পুরো এলাকা লকডাউন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে সচেতনতার অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন বাসা-বাড়ি নিজ উদ্যোগে লকডাউন করে দিয়েছেন অনেকেই। অপরিচিত, গৃহকর্মী, এমনকি স্বজন-পরিজন কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না আবাসিক ভবনে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের হতেও দেয়া হচ্ছে না।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ জানায়, রাজিয়া সুলতানা রোড ছাড়াও কৃষি মার্কেটের সামনে, তাজমহল রোডের ২০ সিরিয়াল রোড, বাবর রোডের কিছু অংশ, আদাবর ও বসিলার পশ্চিম অংশ লকডাউন করা হয়েছে। এসব এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ঘন ঘন মাইকিং করা হচ্ছে।

এছাড়া আদাবরে একটি গলি লকডাউনের কথা জানিয়ে ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রওশানুল হক সৈকত বলেন, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় কয়েকজন রোগী সনাক্ত হবার পর পাঁচটি গলি লকডাউন করা হয়েছে। এসব সড়কে কাউকে প্রবেশ এবং বাহির হতে দেয়া হচ্ছে না। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লকডাউনের আওতায় থাকবেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।

ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, চকবাজারের খাজে দেওয়ান লেন ও তার পাশের লেন, লালবাগের বড় ভাট মসজিদের পাশে ক্রিসেন্ট ক্লাব এলাকা, সূত্রাপুরের চারটি বাড়ি (সোমবার একজন মারা গিয়েছিল), বংশালে একটা বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া ইসলামপুরের একটি বাড়ি লকডাউন করা আছে।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, উত্তর বাড্ডার খানবাগ রোডের এক ব্যক্তির শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপর ওই ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে।

পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার রোজ মেরিনার্স নামে একটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে বলে জানান বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির। তিনি বলেন, রোজ মেরিনার্স মার্কেটের ওপরে ৪০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটের ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য ওই ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে।

এছাড়া পুরান ঢাকায় খাজে দেওয়ান লেনে একটি মসজিদ কমিটির সহসভাপতি ও এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত হওয়ায় ওই এলাকার এক ও নম্বর দুই নম্বর গলির দুইশ ভবন লকডাউন করা হয়েছে।

গত সোমবার সবুজবাগ থানার নন্দিপাড়া-দক্ষিণগাঁও এলাকার ৭৬টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়। সেখানে একই পরিবারের ছয়জনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন সবুজবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহুবুব আলম।