করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চলমান সাধারণ ছুটি আরও ১১ দিন বাড়ানো হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে আগামী ১৫ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই ছুটি থাকবে। আজ শুক্রবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ছুটির আদেশ দেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাবলে দেশব্যাপী কনোনাভাইরাস রোগ মোকাবিলা এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধে অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৫ ও ১৬ এপ্রিল এবং ১৯ হতে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো। এর সঙ্গে আগামী ১৭ ও ১৮ এপ্রিল এবং ২৪ ও ২৫ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি সংযুক্ত থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বর্ণিত ছুটি অন্য সাধারণ ছুটির মতো বিবেচিত হবে না। ছুটিকালীন নিম্নে বর্ণিত নির্দেশনাবলি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে :

ক. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে।
খ. অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হলো।
গ. সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। এই নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘ. এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করা হলো।
ঙ. বিভাগ/জেলা/উপজেলা/ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, জরুরি পরিষেবার (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট ইত্যাদি) ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, সংবাদপত্র, খাদ্য, শিল্প পণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এবং কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও হাসপাতাল এ ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে। জরুরি প্রয়োজনেও অফিস খোলা রাখা যাবে। প্রয়োজনে ওষুধ শিল্প, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখতে পারবে। মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে রিকশা-ভ্যানসহ যানবাহন, রেল, বাস পর্যাক্রমে চালু করা হবে।

জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে বলেও জানানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে।

করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে সংক্রমণ কমেছে। তবে বেড়েছে মৃত্যুর হার। নতুন করে করোনাভাইরাসে ৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬ জন। এ নিয়ে সর্বমোট মারা গেছেন ২৭ জন। দুপুর আড়াইটায় মহাখালী থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ১৮৪টি। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৩৫৯টি পরীক্ষা করেছি।’

পরে আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ পেয়েছি ৯৪ জনের মধ্যে। সর্বমোট সংক্রমণের সংখ্যা ৪২৪ জন।এই ৯৪ জনের মধ্যে যদি আমরা বিশ্লেষণ দেখি তাতে পুরুষের সংখ্যা ৬৯, মহিলা ২৫ জন।’

এর আগে বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল ১১২ জন। তার আগের দিন শনাক্ত হয় ৫৪ জন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর থেকে দিনে দিনে এর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছিল। তবে আজ করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা কমলেও মৃত্যুর হার বেড়েছে।