করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নির্ণয়ের টেস্ট কিট সরকারকে সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েও একদিন আগে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে তা স্থগিত করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আজ শুক্রবার বিকেলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল ডিজাস্টারের কারণে আমাদের পূর্ব ঘোষিত শনিবারের নমুনা টেস্ট কিট সরবরাহ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। এ জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন হয়তো আরও তিন থেকে চারদিন লেগে যেতে পারে।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর এবং গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন, ১৫ মিনিটে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিরুপনের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত বহুল প্রত্যাশিত জিআর কোভিড -১৯ ডট ব্লট সরকারের চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ১১ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন পরীক্ষা ও মতামতের জন্য পর্যাপ্ত নমুনা প্রদান করা হবে। আজ শুক্রবার অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘অনিবার্য কারণবশত এই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজন ব্যক্তির রক্তের নমুনা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দিয়েছে সরকার। এতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আনা হয়েছে বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ওইদিন তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার দুপুরে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গণস্বাস্থ্যের ল্যাব পরিদর্শন করেছেন। এরপর রাতে করোনায় আক্রান্ত পাঁচজনের রক্তের নমুনা সরকার দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে এখন গবেষণা চলছে। ’

জাফরুল্লাহ আরও বলেছিলেন, ‘রক্তের নমুনা পাওয়ায় গণস্বাস্থ্য র‌্যাপিড ডট ব্লট (জি র‌্যাপিড ডট ব্লট) কিট তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। এই কিটের নমুনা সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (উব্লিউএইচও) ও অন্য সংস্থাগুলোকে দেওয়া হবে, যাতে সবাই এটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারে।’

গত মাসে কোভিড-১৯ রোগ পরীক্ষার সহজ ও স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি উদ্ভাবন করার কথা জানায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গত ১৮ মার্চ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কিটের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বা রি-এজেন্ট আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়। পরে ১৯ মার্চ দুপুরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কিট তৈরির উপাদান আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।

গত রোববার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার জন্য কিট তৈরির উপাদান বা রি-এজেন্ট চীন থেকে দেশে পৌঁছায়। তখন জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কিট তৈরির সব প্রস্তুতি আগে থেকে নেওয়া ছিল। কিট তৈরির উপাদানের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

বর্তমানে করোনাভাইরাস শনাক্তে ব্যবহৃত পিসিআর পদ্ধতিটি ব্যয়বহুল। পিসিআর পদ্ধতিতে নাক, মুখের লালা দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তবে এই পদ্ধতিতে করোনা আক্রান্তের প্রথম দিনেই রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। আর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটে এক ফোঁটা রক্তের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। এর জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হতে হয়। ফলে গণস্বাস্থ্যের কিটে পরীক্ষাটি আক্রান্ত হওয়ার তৃতীয় দিনে কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, গণস্বাস্থ্যের কিটের মাধ্যমে ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।