নিজের কষ্টকে আকড়ে ধরার পর,যখন তেল মাখতে পারিনা বলে মূল্যায়নের কদর পাই না তাই আমার জন্য কোন কিছু নেই।এ জন্য আজ এ কঠিন মূহুর্তে আমার জন্য নেই কোন প্রটেকশন ব্যবস্থা, না আছে বেতন ভাতা। না কোন কর্মের মূল্যায়ন। কারণ আমি তো মফস্বল সাংবাদকর্মী। চাপাবাজ, ধান্ধাবাজা, চাদাবাজ আর হলুদরাঙা সাংবাদিক নই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, দূর্যোগের মধ্যেও দায়িত্ব পালন করি। নিরেট সত্য বের করে আনতে কখনো নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাকে পিছনে ফেলে দায়িত্ব পালন করি। ভুলে যাই খাওয়া-দাওয়া। মানুষের কথা বলি, মানবতার কথা বলি। ক্ষুধার্ত নিপীড়িত, অন্যায়, অবিচার, অপরাধের কথা তুলে ধরি। আবার সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরি। হয়তো মফস্বলে থাকি বলে আমার কোন মুল্যায়ন হয় না। প্রমোশন ও পেনশন হয় না। তারপরেও দুর্নাম আছে, সাংবাদিকের জায়গায় সাংঘাতিক শুনি। এটা হয় হলুদরাঙা একধরণে অপসাংবাদিকদের কারণে। তারপরেও অপবাদের লাঞ্চনা মাথায় নিয়েই মহা দূর্যোগের সময় সবার পাশে, সবার কাজে নিলর্জ্জের মতো মাঠে কাজ করি। মানুষের পাশে দাঁড়াই। দুর্ভোগের কথা তুলে ধরি।

দেশের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌছে দিতে খাওয়া ও বিশ্রাম ছাড়াই পরিশ্রম করি। কখনো সামনে রাখা খাবার রেখেই কর্ম দায়িত্বে দৌড়াই। তবুও ভালো থাকুক সবাই। মানবতার জয় হোক। ভালো থাকুক আমার প্রিয় জন্মভূমি প্রিয় বাংলাদেশ। কারণ দেশ ভালো থাকলে যে, দেশের মানুষ ভালো থাকবে। কারণ আমি যে, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের গণমাধ্যমের অতি সামান্য হলেও একজন দায়িত্বশীল সচেতন নাগরিক। আমি ঘুমালে যে, একটি স্তম্ভ দূর্বল হয়ে পড়বে। তাই যতোই দূর্যোগ আসুক না কেন, আমাকে যে মহা দূর্যোগে থেকেই অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। মুক্তির সন্ধান খুঁজে দিতে হবে। সমাধান দেখিয়ে দিতে হবে। ওই যে সাংবাদিকরা জাতির জাগ্রত বিবেক। জানি আমার জন্য কিছু নেই। তবুও কাজ করে যাব। ঘরের পরিবারের স্বজনদের অনেক সময় খোঁজ নেয়া হয়না। সারাদিন খবরের পিছনে পিছনে ছুটি। নানান উৎকুন্ঠায় থাকে আমার পরিবার। কী না কী হয়। কত উৎকুন্ঠা। সঙ্গ পায় না, একা একা খাওয়া খায়। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে, কখন বাড়িতে ফিরি। আমার তো নিরাপত্তা নেই। পরিবারের আপত্তি,কেন সাংবাদিকতা করি। মাঝে মাঝে জীবননাশের হুমকিও আসে। হামলাও হয়, মামলাও হয়। তবুও ভয় না করে কাজ করি। এ পেশায় যে ভয় পেতে নেই।

এ পেশায় পদে পদে ঝুঁকি। তবুও নির্ভীক থাকি। সংবাদমাধ্যমে সমাজের দর্পন। সে দর্পন সবার কাজে, সবার পাশে থাকার। মানুষের পাশে, রাষ্ট্রের কাজে নিবেদিত করেছি নিজেকে। কিছু না হোক, দেশের জন্য, মানুষের জন্য তো কাজ করতে পারছি। আমার কলম, আমার ক্যামেরা, আমার রিপোর্টে তো কতজনেরই না ভাগ্যের দ্বার খোলে। মানবতার অধিকার খুঁজে পায়। নির্যাতিত, নিপীড়িতরা বিচার পায়। এটাই আমরা সার্থকতা। এটা নিয়ে মনের শান্তি খুঁজি। কখনো ক্লান্তি শরীরে ঘাম ঝরে, তবুও সেই ঘামঝরা ক্লান্তি সময়ে খুঁজি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর প্রচেষ্টার নতুন কোন রিপোর্ট সৃষ্টির। মহামারী করোনা ভাইরাসের থাবায় অচল হয়ে পড়েছে আজ গোটা বিশ্ব।এ মরণ থাবা থেকে বাদ যায়নি আমার দেশ বাংলাদেশও। চারদিকে করোনা আতঙ্ক। এরকম একটা ভাইরাস। যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে তৈরি হয় আরেক আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক। মারা গেলে লাশ নিয়ে আতঙ্ক। লাশের সৎকার পর্যন্ত হচ্ছে না আক্রান্ত হবার ভয়ে। যদি লাশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস। এজন্য লাশকে জীবাণুনাশক স্প্রে করে মাত্র তিন চারজনে মাটি দিচ্ছেন। চীনে তো পুড়ে ফেলার ঘটনার খবর পড়েছে মানুষ।তারপরেও মাঠে, খবরের পাশে, খবর জানাতে সবাইকে ঘরে থাকতে বলছি নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে। আহা কী ভয়ঙ্কর সংক্রামক ভাইরাস। এ সংক্রমনে ইতিমধ্যে দেশে ৪৮২ জন শনাক্ত। ৩০ জনের প্রাণহানি।মহামারী এ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার নিয়েছেন জোর পদক্ষেপ। ভাইরাস সংক্রামক রূখতে চালানো হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। সচেতনতামূলক প্রচার মাইকিং। সকল প্রকার গণমাধ্যমে জানানো হচ্ছে ভাইরাসের উপসর্গ। সংক্রামক রোগ হিসেবে গণজমায়েত বন্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় করা হয়েছে লকডাউন। ভয়ে আতঙ্কে পুরো দেশ। তবুও এ ভয়ের মাঠকে শঙ্কামুক্ত করতে নির্ভীকভাবে কাজ করছে প্রশাসন, ডাক্তার-নার্স, পুলিশ, সশস্ত্রবাহিনী আর সাংবাদকর্মী।

এ যুদ্ধাদের মধ্যে আমিও মফস্বলের সংবাদকর্মী। সরকার সবাইকে বাড়িতে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য নিয়েছেন ঘরে ফেরা কর্মসূচি। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছেন। দিবেন বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবাও। স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় দিবেন পর্যাপ্ত সামগ্রী। কিন্তু আমরা? আমাদের জন্য তো কোন কিছু নেই। মফস্বল সাংবাদকর্মী বলে কথা। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পালন করলেও আমাদের জন্য ভাবা হয়না। ভাবা হয় না আমাদের পরিবারের কথা। আমাদের অনেকেই অতি কষ্টে সংসার চালান। ক্ষুধার অনলে পুড়লেও পাথর চাপা দিয়ে সয়ে হাসিমুখে কাজ করে যান ঠিক। কষ্ট যতোই হোক না কেন, প্রকাশ করি না লজ্জার খাতিরেই। কাকে বলবেন? বলার তো জায়গা নেই। নিজের কষ্টকে চেপে রেখে মানুষের কষ্ট তুলে ধরাই যেন আমাদের ধর্ম। জাতির বিবেক বলে কথা। করিও তাই। আমাদের গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠানও সামান্য কিছু ভাতা ও একটি আইডি কার্ড প্রদান করে বলেছেন কাজ করে যাও। সবাই আবার সম্মানী ভাতাও পায় না। কিন্তু কষ্টের তো শেষ নাই। ঘটনার পিছনে ছুটোছুটি। সময়ের পর সময়। ঘন্টার পর ঘন্টা। সময়, পরিশ্রম আর বিনা বেতনে কি সুন্দর জীবন আমার। না বলার কষ্ট নিয়েই এভাবেই চলে যায় বছরের পর বছর। তবুও দিন শেষে বলি ভালো থাকুক সবাই। ভালো থাকুক আমার স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমার প্রিয় বাংলাদেশ। ভাগ্য না বদলালেও বিরতিহীন কাজ।

গৌতম চন্দ্র বর্মন
ঠাকুরগাঁও