মৃত্যুপুরি ইতালিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমতির দিকে। গত কয়েকদিনে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই কম। প্রবাসীরাও দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জানা গেছে, ইউরোপের দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ বাংলাদেশি। তবে মোট কতজন বাংলাদেশি ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা জানা না গেলেও ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে দেশটির বাংলাদেশি কমিউনিটি। যদিও বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পরই শক্ত অবস্থান বাংলাদেশি কমিউনিটির। সংগঠনটির সদস্য প্রবাসী সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতা তুহিন মাহামুদ ৮ বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তুহিন বলেন, ‘মারা যাওয়া ৮ বাংলাদেশির মধ্যে ৩ জনকে ধর্মীয় রীতিনীতি ও রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মেনে দাফন হয়েছেন।’

যারা মারা গেছেন-

গত শনিবার মানিক মিয়া (৪১) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয় মিলানে। তিনি সুনামগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। এর আগে গত বুধবার মারা যান মো. সালাউদ্দিন ছৈয়াল (৪২)। শরীয়তপুরের এ বাসিন্দা থাকতেন বেরগামোতে। একই এলাকায় মৃত্যু হয় মানিকগঞ্জের বাসিন্দা মিজানের। একই দিন রোমে মৃত্যু হয় আনোয়ার হোসেন হিরু (৭২) নামে পিরোজপুরের এক বাসিন্দার।

গত ২ এপ্রিল কুমিল্লার বাসিন্দা মজিবুর রহমানের (৪৬) মৃত্যু হয়। এর আগে গত ৩০ মার্চ মারা গেছেন অপু (৪২) নামে এক বাংলাদেশি। তিনি মিলানে বসবাস করতেন। দেশে তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।

গত ২০ মার্চ মিলানের নিগোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় গোলাম মাওলা (৫৫) নামে এক প্রবাসীর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইতালির বাণিজ্যিক এলাকা মিলানে স্বপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন। দেশে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। এ ছাড়া নাপোলিতে এক বাংলাদেশির মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

মিলানের স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুস সোবহান জুনায়েদ তিন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গোলাম মাওলা, অপু এবং মুজিবুর রহমান মজুুর জানাজা ও দাফন তার তত্ত্বাবধানে হয়েছে। মিলানের মুসলিম কবরস্থানে তিনজনকে দাফন করা হয়েছে।

মাওলানা জুনায়েদ আরও জানান, ইতালিতে করোনায় বিপর্যস্ত প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলা কমিউনিটি। তাদের ফান্ড থেকে অসহায়দের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এদিকে ইতালিতে ৮ বাংলাদেশির মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি। অপরদিকে লকডাউনের কারণে দূতাবাসে যেতে পারছেন না প্রথম সচিব ইরিন ইসলাম এবং শ্রম ও কল্যাণ সচিব এরফানুল হক। দূতাবাস না যাওয়া পর্যন্ত কতজন মারা গেছেন তা বলা সম্ভব না বলে তারা জানিয়েছেন।

করোনা সংক্রমণ রোধে দেশটিতে লকডাউনের সময় ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এর আগে জরুরি কারণে কিছু কিছু এলাকায় লকডাউন তুলে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটির প্রায় ৬ কোটি নাগরিকদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা, খাদ্যসামগ্রীর নিশ্চয়তার জন্য সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। এ ছাড়া অর্থনৈতিক জীবন চাকা সচল রাখতে প্রত্যেকের জন্য বোনাস ঘোষণা করেছে ইতালি সরকার।

ইতালিতে এখন পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ হাজার ৪৬৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৫ হাজার ৪৩৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫১৬।