চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের কাজ করাতে বাধ্য করছেন লালমনিরহাটের সাপ্টিবাড়িতে অবস্থিত আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীর একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারখানায় সাংবাদিকে উপস্থিতি দেখে তেরে আসেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকন।

সোমবার (১৩ মার্চ) থেকে শ্রমিকদের ফোন দিয়ে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) তাদের কাজে যোগ দেওয়ার চাপ দেয় আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি সাপ্টিবাড়ি শাখা কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, তিস্তার চরাঞ্চলে অবস্থিত খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকশত শ্রমিক ও বিভিন্ন এলাকার শ্রমিক এই ফ্যাক্টরীতে কাজ করেন। সরকারী নির্দেশনায় করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কারনে জেলার সকল কারখানা বন্ধ রয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে শত শত শ্রমজীবি মানুষ। সরকারীভাবে পর্যায়ক্রমে অসহায়, দুস্থ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ দেওয়া হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। এই বেকারত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি সাপ্টিবাড়ি শাখা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে চাপ দেন এমনকি কাজে যোগদান না করলে চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখান। বর্তমান সংকটময় সময়ে নিজের শেষ সম্বল চাকুরিটি যেনো না হারায় এই ভয়েই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মঙ্গলবার ভোরবেলা থেকেই আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিতে যোগদান করেন কয়েকশত শ্রমিক।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার আদিতমারি উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীতে সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখেই শ্রমিক দিয়ে বিড়ি তৈরী করাচ্ছে আকিজ বিড়ি কোম্পানি সাপ্টিবাড়ি শাখা কর্তৃপক্ষ। গাদাগাদি করে বসে থাকা শ্রমিকদের অনেকেরই নেই মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস। সাংবাদিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করে ম্যানেজার হ্যান্ড মাইক নিয়ে শ্রমিকদের দ্রুত বাড়িতে যেতে বলেন।
সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে শ্রমিকদের কেনো কাজ করাচ্ছেন এরকম প্রশ্ন করতেই সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকের উপর চড়াও হন আওয়ামীলীগ নেতা সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকন উশৃংখল জনতা। এক পর্যায়ে তারা সাংবাদিকের উপর হামলা চালানোর চেষ্ঠা করে।

এদিকে সারা দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। তবে এ ঘোষণা মানছেন না আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি সাপ্টিবাড়ি শাখা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক বলেন, পেটের ক্ষুদা তো আর করোনা মানে না তাই ম্যানেজার বলার কারনে আমরা কাজে যোগদান করেছি। মালিক তো আর কাম না করলে টাকা দিবার নয়। তিনি জানিয়েছেন, এই বিড়ি ফ্যাক্টরিতে ১ হাজার শ্রমিককে কাজে যোগদান করিয়েছেন।

এ বিষয়ে আকিজ বিড়ি কোম্পানি সাপ্টিবাড়ি শাখার ব্যাবস্থাপক আশিষ মুর্শিদ মুঠোফোনে জানান, আমরা জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমোদনক্রমে কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করেছি। পরে আবার জেলা প্রশাসক পূর্বের লিখিত অনুমোদন স্থগিত করে কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিলে আমরা শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেই। বেকার শ্রমিকদের কোম্পানি থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের সারা দেশে ১৩টি ফ্যাক্টরি আছে , শ্রমিকদের সহযোগীতার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখবেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, সামাজিক দুরত্ব, শারিরিক দুরত্ব প্রতিপালন করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো কিন্তু তারা সামাজিক দুরত্ব বজায় না রাখার কারনে সেই অনুমতি স্থগিত করা হয়েছে এবং জেলার সকল কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।