দিন দিন সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে যে পরিমাণ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, সরকারকে নিতে হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত। সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ২৫২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৯ জনই বাংলাদেশি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় শুধুমাত্র এ দেশটিতেই করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি।

গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, নতুন করে আরও ৩৩৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৭১ জন বাংলাদেশি। সিঙ্গাপুরজুড়ে বাংলাদেশিরা করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪৯ জনে।

প্রতিদিনই সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সেখানে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এর মধ্যে কোনো বাংলাদেশি নেই। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন মোট ৬১১ জন।

বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে প্রবাসীদের ডরমেটরিগুলোকেই দুষছেন। ১৪টি ডরমেটরি এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রত্যেকটিকেই অন্যান্য জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। যারা এর ভেতরে এখনও বসবাস করছেন, তাদের দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

ইতোমধ্যে প্রায় ৩০টি ডরমিটরিকে ক্লাস্টার ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ারও চিন্তা করছে সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জরুরি সেবাদানে জড়িত থাকা ৭ হাজার কর্মীকে ১৮টি অস্থায়ী আবাসস্থলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত:
১. নতুন কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ থাকবে।
২. প্রত্যেক ব্যক্তিকে (যারা জরুরি কাজে নিয়োজিত থাকবেন) মাস্ক ও গ্লাভস পরিধান করতে হবে।
৩. শপিং মল থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন প্রদান করতে হবে।
৪. স্কুলের ক্লাসগুলো অনলাইনে কনফারেন্সের মাধ্যমে নিতে হবে।

এ ছাড়া করোনা মোকাবিলায় শুরুতেই সিঙ্গাপুর কঠোর পদক্ষেপ নেয়। আকাশপথও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডরমেটরিতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পর্যায়ক্রমে সবার করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন বা লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, তাদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক বাংলাদেশিদের খোঁজ রাখছে। করোনার প্রকোপ কমাতে পুরো সিঙ্গাপুরে এখন কঠোর সার্কিট ব্রেকার (লকডাউন) চলছে। এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এখানে এক ডরমেটরিতে অনেকে একসঙ্গে থাকেন। ফলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তবে আশার কথা, এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি করোনায় মারা যাননি।’

করোনায় আক্রান্তের ব্যাপারে হাইকমিশন কী করছে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, ‘আসলে এখানে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। সবকিছু দেখভাল সিঙ্গাপুর সরকারই করছে। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাসেবা বিশ্বমানের। আমরা তাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখছি। এর বাইরে কেউ কোনো সমস্যায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা সমাধান করব। আমাদের হটলাইন নম্বর চালু আছে। সিঙ্গাপুর সরকার শ্রমিক নিয়োগকারী প্রত্যেক কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছে যেন বেতন ঠিকমতো দিয়ে দেয়। আমরা এই বিষয়টিতেও কাজ করছি।’