গাজীপুরে বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। শুক্রবার তারা একটি কারখানাসহ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও বিভিন্নস্থানে সড়ক অবরোধ করেছে। এসময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ৯ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ছুড়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. আসাদুজ্জামানসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকার হাসিন তায়েবা পোশাক কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই এ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের মার্চ মাসের বেতন ভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। শ্রমিকদের বেতনের টাকা দু’দিন আগে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। এদিকে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের (রকেট) মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে উল্লেখ করে একটি নোটিশ বৃহষ্পতিবার রাতে গেইটে টানিয়ে দেয়। কিন্তু ব্যাংকিং সমস্যার কারণে বৃহষ্পতিবার রাতের মধ্যেও ওই টাকা অনলাইন ব্যাংকের মোবাইল একাউন্টে জমা না হওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। রাতের মধ্যে মোবাইল একাউন্টে টাকা জমা না হওয়ায় শ্রমিকরা তাদের পাওনা পরিশোধের দাবীতে শুক্রবার সকালে বন্ধ কারখানা গেইটে এসে জড়ো হয়। এসময় তারা টাকা পরিশোধের ওই নোটিশ দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকদের অভিযোগ শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করেই কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশ টানিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বহিরাগত কিছু সংখ্যক লোকও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে বেশকিছু যানবাহন আটকা পড়ে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে আগামী ২২ এপ্রিল পুলিশের পক্ষ থেকে মালিক পক্ষের কাছ থেকে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন অব্যহত রাখে। উত্তেজিত শ্রমিকরা কয়েকটি গাড়ি ও কারখানার দরজা জানালার কাঁচ ভাংচুর করতে থাকে। এসময় শ্রমিকদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে একটি প্রাইভেটকার দ্রুতগতিতে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় এক শ্রমিকের সঙ্গে ওই কারের ধাক্কা লাগে। এতে শ্রমিকরা চালককে নামিয়ে মারধর করতে থাকে। এসময় পুলিশ শ্রমিকদের রোষানল থেকে ওই চালককে উদ্ধার করতে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চার্জ করলে দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কয়েক সদস্যসহ ৭/৮জন আহত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ৯ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে প্রায় চার ঘন্টা পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে কারখানা কর্তৃপক্ষ আগামী ১৯ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দেন।

এদিকে একইদিন শ্রীপুর উপজেলার ভাংনাহাটী গ্রামের এমএইচসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবীতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই ভাংনাহাটী এলাকার এমএইচসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে জানিয়ে আসছিল। শ্রমিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের তারিখ একাধিকবার নির্ধারণ করলেও পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ বৃহষ্পতিবার শ্রমিকদেও পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও এদিনও পরিশোধ করা হয়নি। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে শুক্রবার কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে সকাল ১০টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-শ্রীপুর সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যার্থ। একপর্যায়ে পুলিশের উদ্যোগে ঢাকা থেকে কারখানার মালিককে শ্রীপুরে আনা হয়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। দুপুরে আলোচনা শেষে আগামী ২২ এপ্রিল বেতন ভাতা পরিশোধের আশ্বাষ দেওয়া হলে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে ওই এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার আরো জানান, ওই দু’কারখানা ছাড়াও বোর্ডবাজার এলাকার টিএনজেডসহ জেলার বিভিন্নস্থানে ৭/৮টি কারখানার শ্রমিকরা এদিন তাদের মার্চ মাসের বেতন ভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অধিকাংশ কারখানার মালিক পক্ষের লোকজনের সঙ্গে যোযোগের চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের আড়াই সহ¯্রাধিক কারখানার অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সুরক্ষা পোশাক পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস সহ গোখাদ্য ও ঔষধ উৎপাদনের জন্য প্রায় ১২০টি কারখানা চালু রাখা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই লকডাউন ভেঙ্গে এসব বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্নস্থানে তাদের মার্চ মাসের বেতন ভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। তারা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন নিয়ম কানুনই মানছেনা।