মহামারি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক,নার্সসহ চিকিৎসাকর্মীরা। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলছেন তারাই। অথচ যথাযথ সুরক্ষার অভাবে এই চিকিৎসক-নার্সরাই আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে।দেশে গত ৪৩ দিনে দেশে ১২৮ জন চিকিৎসক ও ৭১ জন নার্স এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন একজন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। তিনজন চিকিৎসক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৩ জন। বাকিরা বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

রোববার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরূপম দাশ চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানান। ডা. নিরূপম দাশ বলেন,সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ৬০ জনের অধিক চিকিৎসক। রাজধানী ঢাকার মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ১২ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে আটজন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঁচজন, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ১২ জন, ময়মনসিংহে সাতজন, গাজীপুরের কালীগঞ্জে ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা দেশের অন্যান্য জেলায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের সংস্পর্শ আসায় প্রায় ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিন আছেন।

নিরূপম দাশ বলেন, যে হারে চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এতে স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস সংগঠনের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, দেশের ১৫টি সরকারি হাসপাতাল ও ১০টি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ৭১ জন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন এমন ৩০০ নার্স বর্তমানে কোয়ারান্টিনে আছেন।

সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, নার্সদের আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি ও অনেক রোগীর তথ্য গোপন করে সেবা নিতে আসা।

চিকিৎসকদের সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দাবি করা হয়েছে, চিকিৎসকরা রোগীর সংস্পর্শে আসতে এবং চিকিৎসা দিতে যেসব ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) ব্যবহার করছে তা অত্যন্ত নিন্মমানের। এমনকি তাদেরকে যে এন-৯৫ মাস্ক দেয়া হচ্ছে সেটিরও সঙ্কট রয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও চিকিৎসা তো থেমে থাকছে না। বাধ্য হয়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সেবা দিতে হচ্ছে। এর ফলে তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।

এর আগে গত বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক মারা যান।