আপনার করোনা-ভাইরাস পজেটিভ, আপনার ঘরে আইসোলেশনে থাকার কথা। কিন্তু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন দোকানে কিংবা কোনো বন্ধুর বাসায়, বা অন্য কোথাও। ভাবলেন কে আর জানবে! উঁহু, আপনার ধারনা ভুল! আপনি যদি কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের কোনো শহরে বসবাস করেন, তাহলে পাবলিক হেলথ অন্টারিও এতক্ষণে জেনে গেছে আপনার গতিবিধি। শুধু আপনারই নয়, যাঁদের সংস্পর্শে গেছেন- তাঁদের সম্পর্কেও জানা হয়ে গেছে সরকারের লোকের। যে-কোনো মুহুর্তে স্বাস্থ্যবিভাগের ফোন আসবে আপনার কাছে, যাঁদের কাছাকাছি গেছেন, তাঁদের কাছেও। সরাসরি তাঁদের লোকজনও চলে আসবে হয়তো!

ভাবছেন, এটা কি ভাবে সম্ভব! হুঁ, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পাবলিক হেলথ অন্টারিও ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ শুরু করেছে। ফেডারেল সরকারের সহায়তাই তারা এই কাজটি করছে। পুরো কানাডায় ’কন্টাক্ট ট্রেসিং’ চালুর বিষয়টি নিয়েও এখন আলোচনা চলছে।

একজন করোনা-আক্রান্ত রোগী ঘরে থাকছে কিনা বা না-থাকলে কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কার কার সাথে যোগাযোগ রাখছে তা সেলফোনের মাধ্যমে জেনে যাবার বন্দোবস্তটিই হচ্ছে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু দেশ এই সেলফোন প্রযুক্তিটি কাজে লাগিয়ে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে চায়না, বৃটেন, তাইওয়ান, দক্ষিন কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানও একইরকম তদারকি শুরু করতে যাচ্ছে!

উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করা যাক। ধরা যাক, করোনা-আক্রান্ত রোগীটি কোনো একটি দোকানে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। রোগীর সেলফোন “ট্র্যাক” করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগ জেনে যাবে, সে কোথায় যাচ্ছে! শুধু তাই নয়, যে দোকানে সে প্রবেশ করবে, সেই দোকানের কর্মীদেরকেও তাঁদের নিজ নিজ সেলফোনে রোগীর আগমন জানান দিয়ে দেয়া যাবে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ফলে, দোকানের কেউ ঘটনাক্রমে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকলে তাঁকেও যেন তাৎক্ষণিক আইসোলেশনের বন্দোবস্ত করা যায়!

কানাডা চায়, করোনা-আক্রান্ত রোগীই শুধু নয়, তার চারপাশের মানুষও রোগীর অবস্থান জেনে গিয়ে সতর্ক থাকুক যেন রোগটি ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির বাইরে আর একজনকেও আক্রান্ত না করে!

বিশ্বখ্যাত দুই কোম্পানি “অ্যাপল” এবং “গুগল” ইতিমধ্যেই একত্র হয়েছে সম্মিলিতভাবে প্রযুক্তি সহায়তা দেবার জন্যে। প্রাথমিকভাবে আইফোন এবং এন্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে সেলফোন বহনকারী থেকে তথ্য নেয়া যাবে এবং অন্য কোনো ফোন ব্যবহারকারীর জন্য “ব্লু-টুথ” এর মাধ্যমে জানা যাবে।

গত মাসখানেকেরও বেশি ধরে এর গুঞ্জন শোনা গেলেও প্রতিবারই সরকারের পক্ষ থেকে হ্যাঁ সূচক কিছু বলা হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই, এ রোগের নির্মূলে যত রাস্তায় সম্ভব এবং যেভাবে সম্ভব চেষ্টা করা হবে–এই অনমনীয় আকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবে সেলফোনে “কনটাক্ট ট্রেসিং”-এর বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে পুরো কানাডায়!

কানাডার প্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ তেরেসা ট্যাম বলেন, বর্তমানে যে অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে, সেটা ধীরে ধীরে খুলে দেয়ার আগে লাগাতার করোনা-টেস্ট এবং পাশাপাশি সেলফোনে নজরদারি, এ দুটোই খুব দরকারি।

কানাডার উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্প মন্ত্রী নভদীপ বেইন বলেন, আমরা খুব ভালো করে পরীক্ষা করে দেখছি যে কানাডিয়ানদের প্রাইভেসী বজায় থাকে এবং রোগটিরও একটা সুরাহা হয়! জাতীয় তথ্য সংরক্ষন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরো প্রক্রিয়াটি হতে হবে বিজ্ঞান-ভিত্তিক এবং এর একটি আইনগত ভিত্তিও রাখতে হবে যাবে
ব্যক্তির অন্য কোনো তথ্য অ্যাবিউজ করার সুযোগ না থাকে।

এই নজরদারির জন্য প্রচুর স্বেচ্ছাসেবকের দরকার হবে। তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, অনুসরণ, টেলিফোন কল, কম্পিউটার দক্ষতা, ইন্টারভিউ করার দক্ষতা ইত্যাদি সম্বলিত প্রচুর মানুষ ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে স্বেচ্ছাসেবা দেবার আগ্রহ প্রকাশ করেছে! অন্টারিওর স্বাস্থ্য বিভাগ স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহের জন্য আলাদা একটি পোর্টাল চালু করেছে যেখানে স্বেচ্ছাসেবক হতে আগ্রহীরা নিজেদের নিবন্ধন করতে পারবেন। বর্তমানের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’কে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হিসেবে বিবেচনা করছে কানাডা সরকার।