গাজীপুরে বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে রাস্তায় নেমে মঙ্গলবারও বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষোভকালে শ্রমিকরা বিভিন্নস্থানে সড়ক অবরোধ করেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন নিয়ম কানুন না মেনে লকডাউন ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করায় গাজীপুরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুকি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম সহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকার ওয়েস্ট লাইন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরেই মার্চ মাসসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবীতে জানিয়ে আসছিল। বেতন ভাতা পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকালে কারখানার গেইটে জড়ো হয়ে বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও মালিক পক্ষের কাছ থেকে কোন আশ্বাস না পাওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিক অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। বিকেলে পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মঙ্গলবার শ্রমিকদের মোট পাওনাদির আংশিক এবং আগামী ১০ মে অবশিষ্ট পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়। মালিক পক্ষের আশ্বাস পেয়ে প্রায় ৩ঘন্টা পর শ্রমিকরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে বিকেল ৩টার দিকে তাদের অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং মহাসড়কের ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল শুরু করে।

এছাড়াও মহানগরীর ছয়দানা হাজীরপুকুর এলাকাস্থ অমিতি সোয়ের্টাস লিঃ নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা একই দাবীতে একইদিন বিক্ষোভ করেছে। গত ১২ এপ্রিল এ কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা করেনি। পরবর্তীতে ২১ এপ্রিল শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের তারিখ পুনঃরায় ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিনও শ্রমিকরা সকাল হতে তালাবদ্ধ কারখানার গেইটে অবস্থান করতে থাকে। শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি ও কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে দুপুরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে সড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় পুলিশের উদ্যোগে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদেও পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা প্রায় দু’ঘন্টা পর অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিল ও শ্রমিকরা জানান, মহানগরীর কোনাবাড়ির ডিভাইন ফ্যাশন পোশাক কারখানার মালিক পক্ষ পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে মোবাইল ফোনে কারখানার আংশিক শ্রমিকদের মঙ্গলবার সকালে কারখানায় ডেকে আনে। এসময় মালিক পক্ষের লোকজন শ্রমিকদের পরিচয়পত্র ও হাজিরা কার্ড জমা রেখে বেতন ভাতা পরিশোধ করছিল। কার্ড রেখে দেওয়ায় চাকুরি থেকে ছাটাই হওয়ার আশংকায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে জমা নেওয়া কার্ড শ্রমিকদের ফেরত দিলে দুপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

অপর দিকে মার্চ মাসের বেতনভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে মহানগরীর টঙ্গী এলাকার স্প্যাক্ট্রা সোয়েটার কারখানা ও রয়েল সুজ কারখানার শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকালে কারখানার গেইটে জড়ো হয়ে পৃথক ভাবে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা বেতনভাতা না পেয়ে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পৃথকস্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকা পরে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। এসময় পুলিশ কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের বেতন ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের ব্যবস্থা করার উদ্দ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

এছাড়াও মহানগরীর সদর থানা এলাকার লক্ষ্মীপুরা এলাকার ইন্ট্রাম্যাক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এদিন সকাল হতে কারখানার গেইটের সামনে হড়ো হয়। শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। এসময় শ্রমিকরা তাদের বেতনভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকদের দাবী মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-গাজীপুর সড়কের উপর এসে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় পুলিশ বুঝিয়ে শ্রমিকদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। নানা কারণে জেলার কিছু সংখ্যক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধ করতে পারে নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। এসব কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরেই মার্চ মাসসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবীতে জানিয়ে আসছিল। বেতন ভাতা পরিশোধ না করায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরেই লকডাউন ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে মার্চ মাসের বেতন ভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করছে। মঙ্গলবারও জেলার ৫/৬টি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন নিয়ম কানুনই মানছেনা। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি।