বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে র‌্যাবের দায়ের করা মামলায় পলাতক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য নূরে আলম বেপারীকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজিত হালাদারের বিরুদ্ধে। জেলেদের চাল পরিমাপে কম দেয়ার দায়ে একই ইউনিয়নের দুই জন সদস্যকে তার নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত ১ মাস করে কারাদণ্ড দিলেও একই অপরাধে ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। এছাড়া চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে র‌্যাব সরকারি ৬ মেট্রিক টন চাল উদ্ধার করে মামলা দায়ের করলেও এ সংক্রান্ত কাগজপত্র গত ৬ দিনেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে না পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত হালদার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে র‌্যাব। তদন্ত করছে পুলিশ। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি কি ব্যবস্থা নেবেন- উল্টো প্রশ্ন রাখেন তিনি। জেলেদের বরাদ্দকৃত চাল পরিমাপে কম দেয়ার অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্য জাকির হোসেন ও রোকনুজ্জামান হাতেনাতে আটক করে র‌্যাব। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক দুই ইউপি সদস্যকে ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। অথচ পুরো ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ জেলেকে চাল পরিমাপে কম দেয়া হলেও ইউপি চেয়ারম্যান নূর আলম বেপারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

দন্ডপ্রাপ্ত দুই ইউপি সদস্যের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র‌্যাব ওই রাতেই চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারীর বাড়ি অভিযান চালিয়ে ত্রাণের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ১৮৪ বস্তা চাল উদ্ধার করে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।

ত্রাণের চাল উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাব-৮’র ডিএডি আবু হোসেন শাহরিয়ার বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী, তার দুই সহোদর শামছুল আলম ও শাহেআলম এবং স্থানীয় ডিলার সেন্টু খাঁ’র বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি ৬ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দায়েরকৃত মামলার কপিসহ কোনো প্রতিবেদন গত ৬ দিনেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিংবা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অথচ একই সময়ে জেলেদের চাল পরিমাপে কম দেয়ার দায়ে দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে দণ্ড দেয়ার প্রতিবেদন পরদিনই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন তিনি।

বরিশাল জেলা প্রমাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, জেলেদের চাল কম দেয়ার দায়ে গত ১৫ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই ইউপি সদস্যকে দণ্ড দেয়ার প্রতিবেদন পুলিশসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ১৯ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ওই দুই ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। একই সময়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ত্রাণের চাল উদ্ধার এবং এ সংক্রান্ত মামলার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওই মামলার কপিসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদন পাঠায়নি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে র‌্যাবের মামলা দায়েরের পরও অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে তিনিও অভিযোগ শুনেছেন। অপরাধী নিজ দলের হলেও তাকে কোনো ছাড় নয়। চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী উপজেলা কমিটির সদস্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার জেলা কমিটির। বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করা হয়েছে।

বাবুগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ত্রাণের চাল উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাবের দায়ের করা মামলা তদন্ত করছে পুলিশ। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের, পুলিশের নয়।