গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন সন্তানসহ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক বাংলাদেশের এক গৃহবধূকে গলা কেটে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহষ্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনাটি প্রকাশ পায়। নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের পাগলা থানার গোলবাড়ী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী কাজল মিয়ার লর স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা (৪৫), তাঁর বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।

প্রবাসী কাজল মিয়ার ভাই আরিফ জানান, ময়মনসিংহের কাজল মিয়া প্রায় ১৬ বছর ইন্দোনেশিয়ায় চাকুরি করেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি ওই দেশের নাগরিক ফাতেমা আক্তারকে গত ২০ বছর আগে ভালবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কাজল দেশে চলে আসেন এবং কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের জৈনা বাজার কলেজ রোডের আবদার গ্রামের আব্দুল আউয়াল কলেজের পাশে একখন্ড জমি কিনেন। সেখানে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করে স্ত্রী, দু’মেয়ে ও শারীরিক প্রতিবন্ধি এক ছেলে সন্তানকে বসবাস শুরু করেন কাজল। দেশে এসে ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে ছয় বছর আগে কাজল পুনঃরায় চাকুরি নিয়ে মালয়েশিয়াতে চলে যান। তিনি মাঝেমধ্যেই দেশে যাওয়া আসা করেন।

আরিফ ও কাজলের ভাতিজা নাঈম ইসলাম জানান, বুধবার সন্ধ্যার দিকে আরিফকে তার ছোটভাই কাজলের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাজার থেকে মাংস এনে দিতে বলেন। পরদিন (বৃহষ্পতিবার) সকালে ভাসুর আরিফ বাজারে যাওয়ার সময় কাজলের বাড়ির গেইটে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কারো কোন সাড়া না পেয়ে বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে আছে ভেবে তিনি চলে যান। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে তিনি আবারো বাজারে যাওয়ার জন্য কাজলের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। এবারো বাড়ির লোকজনের সাড়া শব্দ না পান নি। কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি ঘরের পেছন দিয়ে মই বেয়ে দোতলায় উঠেন। এসময় দোতলার পিছনের দরজাটি খোলা ছিল। তিনি ভিতরে ঢুকে বাড়ির দোতলার একটি কক্ষের মেঝেতে চারজনের গলাকাটা রক্তমাখা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। নিহত মা ও দু’মেয়ের লাশ উলঙ্গ ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় মেম্বার তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, বুধবার দিবাগত রাতের যেকোনো সময় এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার সময় কোনো চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ কেউ পায়নি।

শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, নিহত মা ও দুই মেয়ের দেহ উলঙ্গ অবস্থায় ছিল। ঘটনাস্থলে একটি ছোরা এবং বটি দা’ পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যাক্তি এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাৎক্ষণিক হত্যাকান্ডের কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বাড়ি ঘিরে রেখে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগকে খবর দিয়েছে।