কলাপাড়ায় করোনা পরিস্থিতিতেও থেমে নেই সরকারী সম্পত্তি দখল-বেদখল, সরকারী জমিতে মাছের ঘের তৈরীসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মান। বালিয়াতলী, নীলগঞ্জ, চাকামইয়া ও ধূলাসারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের এ দখল বানিজ্য। যদিও দখল ঠেকাতে বনবিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেছে, যা আইওয়াশমাত্র বলছেন স্থানীয়রা।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ধূলাসার ইউনিয়নের চাপলি বাজারে পাউবো’র ৪৮ নম্বর পোল্ডারে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো: হারুন হাওলাদার ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নির্মান করছে অবৈধ স্থাপনা। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে নানা গুঞ্জন।

চাকামইয়া ইউপি’র আনিপাড়া গ্রামে গত এক সপ্তাহ ধরে ভেকু দিয়ে সরকারী কয়েক একর জমির মাটি খনন করে গোলপাতার বন, ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাইন, কেওড়াসহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ উজাড় করে স্থানীয় আবদুর রব, মন্নান সহ একটি চক্র মাছের ঘের তৈরীর কাজ করছে। সরকারী বন উজাড় বিষয়ে অবগত করার পর সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুস সালাম পাঁচ পিচ গাছ জব্দ করেন। এরপর ইউএনও এবং ডিএফও অফিসে বিষয়টি জানানোর পর অভিযুক্ত আ: মন্নান ও আ: রবের নামে কলাপাড়া থানায় বন আইনে মামলা করেন রেঞ্জ কর্মকর্তা আ: সালাম।

বালিয়াতলী ইউপি’র চরনজির এলাকার রেকর্ডীয় সম্পত্তির পার্শ্ববর্তী গোলপাতার বন উজাড় করে কয়েক একর সরকারী সম্পত্তি দখল করে ঘর, বাড়ি, পুকুর এবং মাছের ঘের নির্মান করে স্থানীয় প্রভাবশালী হাজী মো. রুহুল-আমিন। এরপর কিছু সম্পত্তি শতাশং প্রতি ৪৩ হাজার টাকা দরে তিনি বিক্রি করেন সজু ফকির, কামাল তালুকদার, আনিচ হাওলাদার এবং ইউনুচ মুন্সি’র কাছে। স্থানীয় আ’লীগ নেতা সোলায়মান মৃধা, শ্রমিক লীগ নেতা বাচ্চু শিকদার, যুবলীগ নেতা জাকির সরদার মোটা অংকের বিনিময়ে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে দখল করে দেন।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ক্রয়কৃত জমির মালিক কামাল তালুকদার এ প্রতিবেদককে জানান, আমি যখন জমি কিনেছি তখন রুহুল আমিন আমাকে গোলবন সহ বুঝিয়ে দিয়েছে। আর সলেমান ভেকু দিয়ে মাটি কেটে দখল দিয়েছে। এমন প্রকাশ্যে বন উজাড়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবগত করার পরও অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ নেননি তারা। তবে পাউবো এ নিয়ে ৪/৫ জনকে আসামী করে কলাপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামে আন্ধারমানিক নদী তীরবর্তী সোনাতলা মৌজায় সরকারী কয়েক একর জমিতে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার দাপটে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে মাছের ঘের তৈরীর কাজ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী গিয়াস উদ্দীন ফকির। বিষয়টি জানতে স্থানীয় ভূমি অফিসে কথা বলা সহ সরেজমিনে গিয়ে ছবি তোলার পর নড়েচড়ে বসে স্থানীয় ভূমি প্রশাসন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ভেকু মেশিন জব্দ করা সহ ড্রাইভার রাসেল (২৫) কে ২০দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড সহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এসময় মূল অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দীন ফকির ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে জরিমানার টাকা পরিশোধ করলেও তার বিরুদ্ধে অদ্যবধি কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়নি ভূমি প্রশাসন। এমনকি মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত ভেকু মেশিনটি পরবর্তীতে নিয়ে নেয় গিয়াস উদ্দীন ফকির।

বনবিভাগের কলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আ: সালাম বলেন, চাকামইয়ার আনিপাড়ায় বনবিভাগের ক্ষতি সাধনের জন্য স্থানীয় আ: মন্নান ও আ: রবের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা করা হয়েছে। সরকারী জমির ক্ষতি সাধনের বিষয়টি স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের বিষয়। পাউবো’র কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ওয়ালিউজ্জামান বলেন, পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পাউবো’র জমিতে বহু অবৈধ স্থাপনা আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব অবৈধ স্থাপনার তালিকা করে উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরন করা হবে। পাউবো’র জমিতে ইতোপূর্বে যাদের ডিসিআর দেয়া হয়েছে সেগুলো আর নবায়ন না করে উচ্ছেদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। বালিয়াতলী ইউপি’র চরনজির এলাকায় পাউবো’র জমি দখল উদ্ধারে ৪/৫ অভিযুক্ত ব্যক্তির নামে থানায় মামলা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন অভিযুক্তদের শাস্তির বিষয়টি দেখবেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, সরকারী জমি রক্ষায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই কথা বললেন বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা। কিন্তু তারপরও থামছেনা সরকারী জমি দখল, সরকারী জমিতে মাছের ঘের তৈরী সহ অবৈধ স্থাপনা নির্মান কাজ। সরকারী জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করাই আমাদের কাজ। ইতোমধ্যে মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের বুড়ির খাল সংলগ্ন এলাকায় ৭.২৫ একর জমি দখল মুক্ত করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সকল সরকারী সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ