করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুকি নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে গত ২/৩ দিন ধরে গাজীপুরসহ ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতে শুরু করেছে হাজার হাজার শ্রমিক। মালিক পক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার খবর পেয়ে এসব শ্রমিকরা লকডাউন উপেক্ষা কওে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন নিজেদের কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।

করোনা পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিকরা চাকুরী বাঁচাতে কখনো পায়ে হেটে, আবার কখনো অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা ভ্যান বা পিকআপে চড়ে রাজধানী ও গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথমদিকেই শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় এসব শ্রমিকরা গাজীপুর ও রাজধানী ছেড়ে বাড়ী গিয়েছিল। কারখানা খোলার খবরে তারা এখন আবার ফিরতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারও গাজীপুরের বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড ও পয়েন্টে বাড়ি থেকে ফিরে আসা অনেক শ্রমিককে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার আবুল হাশেম ঢাকার এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করেন। মঙ্গলবার বিকেলে তার সঙ্গে কথা হয় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চন্দ্রা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তিনি জানান, কাজে যোগ দেওয়ার জন্য মলিক পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে কারখানা খোলার খবর পেয়ে ভোররাতে সেহরী খেয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। ঢাকা যতো দুরই হোক না কেন, চাকুরী বাঁচাতে হলে কর্মস্থলে যেতে হবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কখনো পায়ে হেটে, আবার কখনো অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা ভ্যান বা পিকআপে চড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। কিন্তু কখন পৌছাবো জানিনা।

একই কথা জানালেন সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের আলমগীর হোসেন ও সুরাইয়াসহ আরো কয়েক গামের্ন্টস কর্মী। তবে তারা জানেন না তাদের কারখানা খোলার অনুমতি পেয়েছে কি-না। তারা শুধু মালিক পক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে চাকুরী বাঁচাতে ছুটে চলেছেন।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বড়পুটিয়া এলাকার লাল মিয়া গাজীপুর মহানগরীর নলজানী এলাকার ওডেসা গার্মেন্টসের কর্মী। তিনি বলেন, অফিস থেকে তাকে ফোন দিয়ে কাজে যোগাদান করতে বলেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী তিনি ভোর সাড়ে ৬টায় তিনি বাড়ি থেকে রওনা হন। কোথাও তিনি যাত্রীবাহী বাসের দেখা পাননি। কখনও অটোরিক্সা, কখনও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা আবার কখনও পায়ে হেঁটে বিকেলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এসে পৌঁছান। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, কারখানা খোলা থাকলে এ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। কারখানার ভেতরেও এ দূরত্ব কতক্ষণ বজায় থাকবে ?

শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার শ্রমিক হালিমা আক্তার জানান, কারখানা খুলে গেছে তাই যাচ্ছি। আজ কারখানায় উপস্থিত না হতে পারলে যে কয়দিন ছুটি পাইছি সে কয়দিন অনুপস্থিত দেখাবে কর্তৃপক্ষ। যার কারণে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই স্বামী সন্তানসহ গাজীপুরে যাচ্ছি।

গাজীপুরের গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি এলাকার মেঘনা নীট কম্পোজিট পোশাক কারখানার সহকারি মহাব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) ইকবাল হোসেন জানান, বিশ^ ব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার নির্দেশণা নাই। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকাকে সমর্থন জানিয়ে এ কারখানাসহ জেলার বেশ কিছু কারখানা বন্ধ রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ কারখানায় তিনসহ¯্রাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় শ্রমিকদেরকে তাদের অবস্থান ত্যাগ না করে ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছু সংখ্যক শ্রমিক দীর্ঘ ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। যারা গ্রামের বাড়ি গিয়েছে তারা ফিরছে। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে শ্রমিক কর্মচারীদের সচেতন করা হয়েছে। তাদের মাঝে মাস্ক, সেনিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষ সচেতন রয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তা সহ বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভীড়। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর অঞ্চলের গ্রামের বাড়ি থেকে সকাল হতেই পিকআপ, ট্রাক ও রিক্সা ভ্যানে চড়ে গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। জেলার বিভিন্ন বিভিন্ন স্ট্যান্ডগুলোতে যানবাহনের আশায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অনেক নারী-পুরুষ শ্রমিককে। যানবাহন স্বল্পতার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহণ শ্রমিকরা। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের চেয়ে এসব পোশাক শ্রমিকদের কাছে তাদের চাকুরী রক্ষা করাটা বেশি প্রয়োজন বলে দাবী করছেন তারা।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গাজীপুরের শতাধিক কারখানা জরুরী উৎপাদনের জন্য চালু হয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকরা ইতোমধ্যে কাজে যোগ দিচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা চালু করলে আমাদের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই। তবে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন থেকে তাদেরকে সামাজিক দুরত্ব ও নিয়ম কানুন বজায় রাখার ব্যাপারে শিল্প পুলিশ কাজ করবে।