গাজীপুর মহানগরীতে মসজিদগুলো মুসল্লিদের জন্য খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। মসজিদে তারাবির নামাজ ১২ জন আদায়ের সরকারী নির্দেশ বলবৎ থাকা সত্ত্বেও গাসিক মেয়র মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বোর্ড বাজার আঞ্চলিক অফিস থেকে এক ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৬ এপ্রিল হতে দেশের সকল মসজিদগুলোতে সর্বোচ্চ পাঁচজন করে মুসল্লি নামাজ আদায় করার নির্দেশ রয়েছে। সেইসঙ্গে ২৪ এপ্রিল হতে মসজিদে ১২ জন করে তারাবির নামাজ আদায়ের নির্দেশ। এনির্দেশ বলবৎ থাকা সত্ত্বেও গাজীপুর মহানগরীতে মসজিদগুলো মুসল্লিদের জন্য খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন গাসিক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

গাসিক মেয়র বলেন, গাজীপুর মহানগরীতে মাত্র দু’একটি এলাকায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। বাকীগুলো পাশর্^বর্তী উপজেলা গুলোতে অবস্থান করছে। যেহেতু গাজীপুরের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এসব কারখানায় সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে যদি শ্রমিকরা কাজ করতে পারে, তাহলে মসজিদেও মুসুল্লীরা সামাজ আদায় করতে পারবে। মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে বাজারে ও দোকানে যাচ্ছে, ভীড় করছে। তাই এ রমজান মাসে এখন আর মসজিদের অল্পসংখ্যক মুসল্লিদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার কোন প্রয়োজন নেই। শুক্রবারের জুমার নামাজ ও রমজানের তারাবির নামাজে মুসল্লিগণ অংশ নিতে পারবেন। এতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন বাধা থাকবে না। আল্লাহ এবং রাসুলকে পাওয়ার জন্য আমরা সকলেই মসজিদ মুখি হয়ে যারা অসুস্থ্য নয় এবং যে সব ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাসের কোন পজেটিভ পাওয়া যায়নি। এসব এলাকার মসজিদে যদি মুসল্লিরা নামাজ পড়তে চায় তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে কোন সমস্যা হবে না। তবে মসজিদগুলোকে ভাইরাস মুক্ত রাখতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জীবানু নাশক সরবরাহ ও সহায়তা করা হবে। নামাজের আগে ও পরে মসজিদকে জীবানু নাশক ও স্যাভলন দিয়ে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে। চার ফুট দুরত্ব বজায় রেখে মুসুল্লীরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। সাধারনতঃ মসজিদে প্রবেশের আগে মুসুল্লীরা ওজু করে ও পাক পবিত্র হয়ে প্রবেশ করেন। মসজিদে প্রবেশের মুহুর্তে মুসুল্লীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে না। তবে ওই সব এলাকায় যেন বাইরে থেকে কোন লোক করোনার উপসর্গ নিয়ে আসতে না পারে সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের নগরে আমরা সবাই নিরাপদে থাকবো। আমাদের পরিবার ও সন্তানদের নিরাপদে রাখবো।

মেয়র বলেন, মসজিদে খতিবগণ স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপকারিতা নিয়ে বয়ান করবেন। এতে সচেতনতার প্রচার বৃদ্ধি পাবে। ফলে মানুষ জমি থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধান কাটবে। আর যেহেতু করোনার কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি সেহেতু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে মুক্তি চাওয়ার সুযোগ থাকবে। তারপরও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরও আলোচনা করা হবে। যদি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালিত না হয় তাহলে প্রয়োজনে এ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, গাজীপুরের গার্মেন্টস ও আশেপাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু খোলা হয়েছে সেহেতু এ এলাকার মানুষকে আর বন্দি রাখা ঠিক হবে না। ওয়ার্ড ভিত্তিক ধানকাটাসহ অন্যান্য কৃষি কাজ যেগুলো আছে তা যেন তারা করতে পারে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন ইসলামিক মিশন এবং তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয় তাহলে জেলায় করোনা প্রতিরোধের যে কমিটি রয়েছে সে কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জেলার পরিবেশের ব্যাপারে জানাতে হবে। পরে নতুন নির্দেশনা দিলে তা কার্যকর হবে। করোনা পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা দিয়েছেন, তার বাইরে আমরা যেতে পারি না।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম তরিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে জানান, মেয়র মহানগরের মসজিদগুলোতে তারাবিহ ও জুম্মার নামাজ উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণার কথা শুনেছি। তবে সে-টা তার নিজস্ব বক্তব্য। এটা কোন সরকারি বক্তব্য নয়। ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে দেশের মসজিদে মুসুল্লীদের নামাজ আদায়ে ইতোপূর্বে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা-ই এখনও বলবৎ আছে। উনি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত না মানলে উনার বিষয়। আমি এর বাইরে অন্য কোন বার্তা বা নির্দেশনা পাইনি। মন্ত্রণালয়ের এরকম কোন নির্দেশনা থাকলে টিভিতেও যেত। কিন্তু তাও তো দেখিনি।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরে মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৩২৮ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত ১১৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় ৯০ জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৭০ জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৩২ জন ও শ্রীপুর উপজেলায় ২২ জন। এ পর্যন্ত ওই ভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য জেলা থেকে দুই হাজার ৩৮৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে

উল্লেখ্য, করোনা সংক্রামন ঠেকাতে বাংলাদেশের মসজিদ সমূহে নামাজ আদায়ের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে সরকার। গত ৬ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রনালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মসজিদে কোন জামাতে পাঁচ জনের বেশী মুসল্লি অংশ নিতে পারবে না। জুমার নামাজে অংশনিতে পারবে দশ জন। এ সময় মুসল্লিদের নিজ নিজ বাসায় নামাজ আদায় করতে বলা হয়। অপর দিকে গত ২৪ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয় রমজানে এশার জামাতে মসজিদের ইমাম, মেয়াজ্জিন,খতিব, খাদেম এবং দুইজন হাফেজসহ ১২জন মুসল্লি তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে। অন্যদের নিজ নিজ বাড়িতে তারাবির নামাজ আদায় করা জন্য বলা হয়।