সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমনের ফলে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরনে কলাপাড়ায় দুস্থদের নিয়ে ফটোসেশনের পর এবার শুরু হয়েছে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার ফটোসেশন। দলীয় আনুগত্যদের সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কৃষকের সহায়তার নামে চলছে এ ধান কাটা পর্ব। হ্যান্ডমাউথ মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভ্স পড়ে হাতে কাঁচি নিয়ে ফসলের ক্ষেতে দাড়িয়ে এরা কৃষকের ধান কেটে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে সহায়তা করছেন বলে জানান সংবাদকর্মীদের। আবার কারো কারো অনুসারীরা এসব ছবিসহ ছড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কয়েককজন কৃষি কর্মকর্তা এ নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাসও দিয়েছেন।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান তার ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে বলেন, আসলে বিষয়টি এমন হয়েছে ছাত্রজীবনে বাবা-মা বলে পড়া-লেখা করতে কিন্তু ছেলে যায় মার্বেল খেলতে। কাজের কাজ রেখে অকাজের ক্ষ্যাতা পোড়ানো। বিগত দিনে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সভায় কৃষক এর সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকেই বলেন একটু সংক্ষেপ করুন। তখন আর ভালো লাগেনা। আর লাগবেই বা কেন ওখানে তো কোন লাভ নেই। এখন সস্তা বাহবা নেয়া, সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য এসব ভন্ডামি করছে। কৃষিবিভাগ কখনোই বলেনি যে আমরা অসহায় কিম্বা আমাদের শ্রমিক দেন, ধান কেটে দেন। ধানের রোয়া-বীজ লাগানোর সময় আসতেন তখন বুঝা যেত কত পারেন লাগানোর সময় সারিতে রোপন, পারচিং, লোগো পদ্ধতি, সময় মত সুষম সার ব্যবহার, আগাছা বাছাই, বালাই নাশক সার প্রয়োগ সহ কাজগুলো কৃষকের খুবই কষ্টের কাজ। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগন দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে কৃষকদের বুঝাতে চেষ্টা করেন ফসল বাঁচাতে হলে এসব অত্যাবশ্যকীয় কাজ গুলো সময় মত করতে। তারই ফল হবে সুন্দর ধানের ফলন। আর আজকে হঠাৎ হঠাৎ এক এক এলাকায় গিয়ে দুই পোচ ধান কেটে ফেসবুকে শেয়ার করছেন কিছু অসাধুরা। এসব কেউ কখনো কৃষিবিভাগকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেন না। মনে হচ্ছে দেশে কৃষি বিভাগ নেই, কৃষকের অভিবাবক নেই।

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে দেশের হাওর অঞ্চলে ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতা কর্মীদের কৃষকের পাশে দাড়ানোর নির্দেশনা দেয়ার পর ছাত্রলীগ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকের ধান কেটে সহায়তা করেছে তেমনি কলাপাড়ায় মহিপুর থানা ছাত্রলীগ ও কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগ দু’একজন প্রান্তিক কৃষকের স্বল্প পরিমান জমির ধান কেটে দিয়েছে। এরপর মাঠে নামে উপজেলা শ্রমিক লীগ সুসজ্জিত পোষাক, জুতা, সানগ্লাস সহ এক রঙের গেঞ্জি পড়ে তারাও কৃষকের সহায়তায় ধান কাটতে মাঠে নামে। কৃষকের ধান কেটে সহায়তা করার নামে কাঁচা ধান কেটে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন একজন পার্লামেন্ট সদস্য। এছাড়া সুসজ্জিত শাড়ী, রঙীন চশমা ও হাই হিল পড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকের ধান কাটার নামে ধানক্ষেতে ফটো সেশন করে আলোচনায় এসেছেন অনেক নারীনেত্রী। প্রকৃতপক্ষে নেতা-কর্মীরা কৃষকের কতটুকু সহায়তা করেছেন, তা নিয়ে সাধারন মানুষ সন্দিহান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, যে যেখানেই কৃষকের ধান কাটেন, কেটে দেন। এতে আমাদের খারাপ লাগেনা। বরং ভালো লাগে এই ভেবে যে, আমরা যে অসহায় মানুষগুলোর জন্য যুদ্ধ করি তাদের কথা অন্যরা আজ কিছুটা হলেও ভাবছেন। এখন মনে হয় আর কখনো কৃষকের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে শুনতে হবেনা- প্লিজ সংক্ষেপ করুন।

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি