গাজীপুরে ছাটাই আতঙ্কে দুই কারখানার শ্রমিকরা শনিবার বিক্ষোভ করেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করতে কাজে যোগ দিতে না পেরে এসব শ্রমিকরা এসময় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটি অবরোধ করেছে। দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে ওই মহাসড়কে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে শিল্প পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দু’হাজার ৭২টি কারখানার মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ৮৭৩টি কারখানা চালু হয়েছে। গাজীপুর মহানগরের তারগাছ এলাকায় অনন্ত ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড নামের কারখানাটি একই কারণে বন্ধ থাকার পর গত ২৬ এপ্রিল হতে চালু হয়। এ কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু করোনা সংক্রমনরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কারখানার দুই হাজার শ্রমিক নিয়ে সাময়িকভাবে কাজ শুরু হয়। এতে কাজে যোগ দিতে না পারায় অবশিষ্ট শ্রমিকদের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক দেখা দেয়। কাজে দিতে না পারা শ্রমিকরা শনিবার সকালে কারখানার গেইটে এসে জড়ো হয়। এসময় তারা কাজে যোগ দেওয়ার জন্য কারখানায় প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা কর্মীরা বাঁধা দেয়। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা গেইটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতির দাবী জানায়।

এসময় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে সাময়িকভাবে উৎপাদন কাজ শুরু করা হয়েছে, পরবর্তীতে কারখানার সকল শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে কাজে নেওয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়াও যেসব শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে পারছে না, তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়া পর্যন্ত সরকার ঘোষিত বেতনের শতকরা ৬০ ভাগ হারে বেতন প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে কারখানার কোন শ্রমিককে ছাটাই করা হচ্ছে না। শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে। এসময় সবাইকে একসঙ্গে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতির দাবী জানিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে।

শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান জানান, দাবী মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ রবিবার হতে সকলকে কাজে যোগদানের সুযোগ দেয়ার আশ^াস দিলে বিক্ষোভকারীরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে প্রায় দু’ঘন্টা পর সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার কয়েক শ্রমিক জানান, শ্রম মন্ত্রনালয় থেকে শ্রমিক ছাটাই বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও কারখানা মালিকরা সেই নির্দেশনা মানছে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ছাটাইয়ের নানা ষড়যন্ত্র করছে। আংশিক শ্রমিকদের কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়ে অবশিষ্ট শ্রমিকদের পরবর্তীতে কাজে নেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন কারখানায় ছাটাই করা হচ্ছে। এ কারণেই শ্রমিকরা সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার দাবীতে আন্দোলন করছে।

অপরদিকে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জিরানী এলাকায় অকো টেক্স লিমিটেড নামের কারখানার শ্রমিকরা একইদিন সকালে বিক্ষোভ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিল জানান, অকো টেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে শনিবার সকাল হতে গেইটে এসে জড়ো হয়। এ কারখানায় প্রায় ৪হাজার শ্রমিক কাজ করেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশণা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ প্রায় দু’হাজার শ্রমিককে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেয়। অবশিষ্ট শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে না দেওয়ায় তাদের মাঝে ছাটাই আতংক দেখা দেয়। এসময় তারা কারখানার সকল শ্রমিককে একসঙ্গে কাজে যোগদানের সুযোগ প্রদান ও শ্রমিক ছাটাই বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের মধ্যস্থতায় আলোচনা শেষে কারখানা কর্তৃপক্ষ ৭মে’র মধ্যে কারখানার সকল শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে কাজে যোগদানের সুযোগ দেয়ার আশ^াস দিলে বিক্ষোভকারীরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে প্রায় তিন ঘন্টা পর সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।