গাজীপুরে শতভাগ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে মঙ্গলবার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট করেছে। এসময় তারা কারখানায় ভাংচুর ও কারখানার কয়েক কর্মকর্তাকে মারধর এবং তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একজনকে আটক করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম রেজা এবং কারখানার কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকাস্থিত ময়েজ উদ্দিন টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে শতভাগ বেতন পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালে কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় সরকার ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ি শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতনের ৬০শতাংশ তাদের মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে নির্ধারিত তারিখ সোমবার পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এ কারখানায় প্রায় দুইহাজার শ্রমিক কাজ করেন। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ দেয়। কিছুক্ষণ পর তারা শতভাগ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছলেও তাদেরকে কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি আন্দোলনরত শ্রমিকরা। একপর্যায়ে দাবী মেনে না নেওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার গেইট থেকে ভিতর থেকে বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর তারা কারখানায় তান্ডব চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও কারখানার কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে মারধর করতে থাকে এবং তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় পুলিশের হামলায় শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে কারখানার ভিতরে উত্তেজিত শ্রমিকদের সঙ্গে মালিক পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাণ্টা ধাওয়া ও হাতাহাতি হয়। এতে অন্ততঃ ১০/১২ জন আহত হয়। গেইট ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় পুলিশ চেষ্টা করেও কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রায় ঘন্টা খানেক পর কারখানার মালিক পক্ষের কয়েক কর্মচারী কৌশলে গেইট খুলে দিলে পুলিশ ভিতরে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে আন্দোলনকারীরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে। শ্রমিকরা জানায়, ঘটনার সময় শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে কারখানায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় বাদল নামের এক শ্রমিককে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে জেলার গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, শ্রীপুর উপজেলার মাধখলা এলাকাস্থ কালার ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল ও মে মাসের বেতনসহ ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবীতে মঙ্গলবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার ও স্থানীয়রা জানান, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে উৎপাদন কাজ না থাকায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ইসলামপুর এলাকার টার্গেট ডেনিম এন্ড ক্যাজুয়্যাল পোশাক কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতনভাতা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা হয়। তবে কার্ড পাঞ্চ না করায় শ’খানেক শ্রমিকের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। ইতোমধ্যে কারখানা লে-অফ ঘোষণার ৪৫ দিন পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাতে কর্তৃপক্ষ আবারো আগামী ৩১ মে পর্যন্ত কারখানা ছুটি করে। মঙ্গলবার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধ দেখতে পায়। এসময় তারা কারখানা ছুটি ঘোষণার কথা জানতে পেরে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেওয়ার ও অবশিষ্ট শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবী জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে। এছাড়াও শতভাগ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে লক্ষ্মীপুরা এলাকার ইন্ট্রাম্যাক্স এবং টঙ্গী এলাকার এটি মার্কস ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা এদিন বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি করেছে।