করোনা মহামারির মধ্যেই দেশের উপকূলীয় এলাকার দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। দক্ষিণপূর্ব ও দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টির গতি বাড়িয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে আসছে। বরগুনার উপকূলীয় ৬টি উপজেলা সদার, বামনা, আমতলী, বেতাগী, পাথরঘাটা, বেতাগী. তালতলী এবং বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল এটি আঘাত হানতে পারে। রোববার দুপুর ২টায় ঘূর্ণিঝড় আমফান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩২৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৬০ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার যেন উপকূলের কাছাকাছি থাকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত রাডারের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে আসতে পারে। এর কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গাতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকছে।

ঘূর্ণিঝড়েরর গতি বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, আমফান যে গতিতে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশে আসতে অন্তত আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। ১৯ কিংবা ২০ মে এটি বাংলাদেশে আঘাত হানবে। ঝড়টি বারবার গতিপথ পরিবর্তন করছে। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবনের দিকে আঘাত হানার সম্ভাবনা দেখা গেছে আবার গতিপথ পরিবর্তন করছে। তাই পাঁচ শ’ কিলোমিটারের ভেতরে না আসা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না ঝড়টি কোথায় আঘাত হানবে এবং কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে।

এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে. আগামী মঙ্গলবার অথবা বুধবারে এটি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। গত বছরের নভেম্বরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিপথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের উপরও আছড়ে পড়তে পারে নতুন এই ঘূর্ণিঝড়।

গতবছরের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ উড়িষ্যার পারাদ্বীপের কাছ থেকে বাঁক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাশ দিয়ে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আমফানের গতিপ্রকৃতিও সেই রকম বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা মনে করলেও এটি বুলবুলের পথ অনুসরণ করবে কিনা তা এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা প্রস্তুতি সম্পর্কে বরগুনা জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আমফান মোকাবেলায় ইতিমধ্যেয়ই বরগুনায় ৫০৯ টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত আছে, এর মধ্যে স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার হচ্ছে ৩৪১ টি এবং স্কুল কাম আশ্রয় কেন্দ্র হচ্ছে ১৬৮ টি। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারী আবাসন আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলার প্রস্ততি সম্পর্কে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সাইক্লোন আমফান মোকাবিলায় ৩৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবারও মজুদ করা হয়েছে।

দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঝড়ের প্রভাবে আজ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেশের অন্যান্য জেলায় আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকবে। তবে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, পাবনা, পটুয়াখালী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ আরও দু-এক দিন থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও বলছে, চলতি মাসে আবহাওয়া পরিস্থিতি পূর্বভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রয়েছে। এ মাসে সাগরে দুটি নিম্নচাপ হওয়ার কথা। যার মধ্যে অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।