গাজীপুরে শতভাগ ঈদ বোনাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধের দাবীতে ইভেন্স গ্রুপের দু’টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। শ্রমিকরা এসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়কগুলো অবরোধ করেছে। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। এছাড়াও আরো কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রায় একই দাবীতে একইদিন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে।

শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার ইভেন্স গ্রুপের তিনটি কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে দু’টি কারখানা ইভিটেক্স এ্যাপারেলস ও ইভিটেক্স ফ্যাশন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শতকরা ৫০ভাগ ঈদবোনাস দেওয়ার সরকারের ঘোষণাকে না মেনে তারা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে শতভাগ ঈদ বোনাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। শ্রমিকদের ওই দাবীর প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্তানুযায়ী শতকরা ৫০ভাগ ঈদবোনাস প্রদান এবং চলতি মে মাসের বেতন জুন মাসে পরিশোধের ঘোষণা দেয়। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ওই দু’কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের দাবী মেনে না নেওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে নামাজের বিরতির পর ওই দুই কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে তারা কারখানা থেকে বাইরে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় তারা শাখা সড়কগুলোও অবরোধ করে। এতে মহাসড়ক ও সড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশ ও নারীসহ অন্ততঃ ৭/৮জন আহত হয়েছে। প্রথম দফার এ ঘটনার পর শ্রমিকরা আবারো সংঘবদ্ধ হয়ে বিকেলে ওই মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবী মেনে নিয়ে শতভাগ ঈদবোনাস প্রদানের ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে।

ওই গ্রুপের ইভিটেক্স অ্যাপারেলস ও ফ্যাশন লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শেখ মনিরুজ্জামান জানান, সরকারি নির্দেশে আমরা অর্ধেক বোনাস দেয়ার ঘোষণা প্রতিটি ফ্লোরের শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বহিরাগতরা নানা গুজব ছড়িয়ে ও শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা শতকরা ৫০ভাগ ঈদ বোনাসের সরকারের সিদ্ধান্তকে না মেনে অযৌক্তিকভাবে শতভাগ ঈদবোনাসের দাবীতে দিনভর বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বিকেল সাড়ে৫টার দিকে তাদের দাবী মেনে নিয়ে শতভাগ ঈদ বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে শ্রমিকদের চলতি মে মাসের বেতন পরবর্তী মাসে (জুন) পরিশোধ করা হবে। শতভাগ ঈদ বোনাস দেওয়ার আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধসহ তাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়ে কারখানা এলাকা ত্যাগ করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, সড়কের উপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ বা টিয়ার সেল ছোড়া হয়নি। তবে দুপুর আড়াইটার দিকে অবরোধকারী শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর কিছু সময় পর বিকেলে শ্রমিকরা পুনঃরায় মহাসড়কে এসে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। একপর্যায়ে পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ শতভাগ ঈদ বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান জানান, মহানগরের ফ্লোরেট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবীতে মঙ্গলবার সকাল হতে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি করেছে। দুপুর ২টার দিকে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর গিয়ে অবস্থান নেয় এবং মহাসড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে তাদের পাওনাদি বুধবার পরিশোধের আশ্বাস দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে বিকেল ৫টার দিকে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অবরোধের কারণে ওই মহাসড়কে দীর্ঘক্ষণ যানবাহন চলাচল ব্যহত হয়।

অপরদিকে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, মহানগরের টঙ্গী এলাকার আলা উদ্দিন এন্ড সন্স কারখানার শ্রমিকরা শতভাগ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবীতে মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় উত্তেজিত কিছু শ্রমিক পার্শ্ববর্তী একটি কারখানায় ইট পাথর ছুড়ে কাঁচ ভাংচুর করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।