কলাপাড়ায় ঘূর্নিঝড় আম্ফানের তান্ডবে অন্তত: তিন শতাধিক ঘরবাড়ী বিধস্ত হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭-৮ ফুট বেশী পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ৯ শতাধিক মাছের ঘের ও পুুকুর থেকে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে বর্ষাকালীন সবজির ক্ষেত সহ বোরো ধানের ক্ষেত। ঘূর্নিঝড় আম্ফানের তান্ডবে কলাপাড়ার ১২ টি বৈদ্যুতিক খুঁিট উপড়ে গেছে। দুইশতাধিক স্পটে গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে বলে জানা যায়। বুধবার সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িঁ বাধের বাইরে অন্তত: দু’শতাধিক ঘরবাড়ী পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসময় কয়েক হাজার মানুষ আশে-পাশের সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয় । অনেক মানুষ পানি বৃদ্ধির আশংকায় বহুতল ভবন এবং স্কুল কলেজে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে । উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁধভাঙ্গা জনপদ লালুয়া ইউনিয়নের ১৭ গ্রাম এখন পানিবন্দী হয়ে আছে। আম্ফানের তান্ডব থামলেও অমাবস্যার প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকালে রাবনাবদ নদীর জোয়ারে লোনা পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় ফসলী ক্ষেত। এমকি রান্না করার চুলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট। এখন ওই গ্রামের অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের রাবনাবাদ পাড়ের প্রায় ২০০ মিটার রিং বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বাঁধঘেষা অন্তত ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতির শিকার হয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে শতশত গাছপালা।

দেবপুরের স্থানীয় বাসীন্দা ফরহাদ মৃধা জানান মুহুর্তের মধম্য বাঁধটি জলোচ্ছ্বাসে বুধবার রাতে ধ্বসে যাওয়া শুরু হলে তার প্রায় চার লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। পাঁচটি পুকুরের মাছ, দেবপুর গ্রামের অর্ধশত কৃষকের ডাল জাতীয় শস্য লোনা পানির প্লাবনে নষ্ট হয়ে রাবনাবাদ গিলে খেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কলোনীর অধিবাসী মো. আলামিন জানান, তার ঘরে একটি গাছ পড়ে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি মাত্র দু’মাস আগে অনেক কষ্ট করে ঘরটি তুলেছিলেন ।
পৌরশহরের চিংগড়িয়া এলাকার অধিবাসী বিমল হাওলাদার জানান, তার পাশাপাশি দু’টি ঘড়ে একটি গাছ পড়ে ঘরটি ভেঙ্গে যায় । তিনি সহ তার পরিবারের লোকজন রাত জেগে কাটিয়েছেন। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল অন্তত: ঘন্টায় ১৫০কিলোমিটার ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যমতে আম্ফানের তান্ডবে এখন পর্যন্ত ১জন নিহত ও ১জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ৩৭৮টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৪টি আংশিক এবং ৫৪টি সম্পুর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। পুর্ণাঙ্গ তথ্য তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, ঘূর্নিঝড় আম্ফানের জন্য মোট ১৯৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। তবে এলাকায় বাতাসের পাশাপাশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছপালা, ঘরবাড়ী সহ হাঁস-মুরগি গবাদি পশু ও মাছের ঘেরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ।

 

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি