গাজীপুরে ঈদ বোনাস ও হাজিরা বোনাস পরিশোধের দাবীতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শনিবার দিনভর কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা কারখানার মালামাল ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্ততঃ ১২জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড সর্টগানের গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়েছে। এছাড়াও একইদিন মহানগরীর অপর একটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. আসাদুজ্জামান ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকাস্থিত প্যানউইন অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও হাজিরা বোনাস পরিশোধের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল আজ (শনিবার)। শ্রমিকরা সকালে কারখানায় এসে তাদের পাওনাদির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু সকাল ১০টা পর্যন্ত মালিক পক্ষের কোন কর্মকর্তা কারখানায় আসেন নি এবং শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করেন নি। শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় কিছু শ্রমিক কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর শুরু করে। তারা কারখানার বিভিন্ন মালামালে অগ্নিসংযোগ করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। বেলা ১২টার দিকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিলে আন্দোলনরত শ্রমিকরা দুপুর দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে কারখানা এলাকায় অবস্থান নেয়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও কর্তৃপক্ষের সাড়া ও পাওনাদি না পেয়ে শ্রমিকরা বিকেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে এক ইন্সপেক্টরসহ পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হয়। পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেল চারটার দিকে শতাধিক রাউন্ড টিয়ার সেল ও সর্টগানের গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে। তবে কিছু শ্রমিক রাত ৮টা পর্যন্ত কারখানা ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান অবস্থান করে। এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে পুলিশ। আলোচনা শেষে রাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ রবিবার দুইটার দিকে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে।

এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, গাজীপুর মহানগরের সালনা এলাকার শ্যামলী গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ঈদ বোনাসের দাবীতে শনিবার সকাল হতে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুরে দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ আগামী ৪জুন শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দেয়। কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্ত মেনে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে কারখানা এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।