দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় দুই কোটি মানুষ থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগে ভুগছে। দ্য জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম-এ প্রকাশিত নতুন স্টাডিতে এ তথ্য জানা গেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগীদের থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েন্স সায়েন্সেস শাখার থাইরয়েড মেডিসিন ও ইন্টারভেনশনাল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল বারী এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, আগামীকাল (২৫ মে) বিশ্ব থাইরয়েড দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়—থাইরয়েড রোগ ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, থাইরয়েড স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এবং থাইরয়েডের আধুনিক চিকিৎসা বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত করা। রাজধানীর ধানমন্ডির দ্য থাইরয়েড সেন্টার লিমিটেড প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব থাইরয়েড দিবস পালন করবে।

ডা. এ কে এম ফজলুল বারী বলেন, ‘থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের অতি প্রয়োজনীয় একটি গ্রন্থি, যা থেকে থাইরক্সিন (টি থ্রি) এবং আয়োডোথাইরোনিন (টি ফোর) নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনের মাধ্যমে শরীরের বিপাক ক্রিয়া, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শারিরীক ও মানসিকবৃদ্ধিসহ ক্যালসিয়ামের বিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে।’

‘বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ (প্রায় দুই কোটি) মানুষ থাইরয়েড গ্রন্থি বিভিন্ন রোগে ভুগছে। থাইরয়েড গ্রন্থিতে সাধারণত প্রদাহ, থাইরোডিটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম, গয়টার বা ক্যান্সার রোগ হয়ে থাকে’ বলেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল বারী বলেন, ‘বর্তমানে কোভিড-১৯ নতুন ধরনের করোনাভাইরাস যা বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে। এই রোগটি মূলত শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে অকার্যকর করে দেয়। কোভিড-১৯ সাধারণত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। যেহেতু কোভিড-১৯ নতুন ভাইরাস তাই এটি থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ সমূহকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে দ্য জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল অ্যান্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম-এ প্রকাশিত নতুন স্ট্যাডিতে জানা গেছে যে, কোভিড-১৯ রোগীদের থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘হাইপোথাইরয়েডিজম রোগীদের বিশেষ করে যেসব রোগী থাইরয়েড রোগ নিয়ন্ত্রনহীন, প্রথম থাইরয়েডের ওষুধ সেবন শুরু করেছেন বা নিয়মিত ওষুধ খান না তাদের কোভিড-১৯ ইনফেকশন হলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজমের মূল কারণ হাসিমোটো থাইরয়েডিজম, এটি একটি ইমিউন ডিজিস যা প্রাইমারি ইমিউন ডিসঅর্ডারের (পিএইডি) সঙ্গে থাকতে পারে, এই সব রোগীদের কোভিড-১৯ ইনফেকশন হলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।’

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল বারী জানান, হাইপারথাইরয়েডিজম রোগীদের এন্টি থাইরয়েড ড্রাগ ব্যবহার করলে অগ্রানুলোসাইটোসিস হতে পারে, যা কোভিড-১৯ এর উপসর্গের মতো গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর, শরীর ব্যথা। এ ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। থাইরয়েড রোগের ওষুসমূহ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে না, থাইরয়েড হরমোনের জন্য চোখে যাদের সমস্যা আছে এবং বেশি ডোজ স্টেরয়েড খায় তাদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কোভিড-১৯ প্রকোপের সময় যে সব রোগীদের বিনাইন থাইরয়েড নডিউল রয়েছে, তাদের সার্জারি, রেডিও আয়োডিন থেরাপি দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করার জন্য বলা ভালো, যোগ করেন তিনি।

বৃটিশ থাইরয়েড এসোসিয়েশনের (বিটিএ) এক গবেষণা থেকে জানা যায় সার্স ভাইরাস (সার্স থাইরয়েড) এ আক্রান্ত রোগীদের থাইরয়েড হরমোন টি-থ্রি ও টি-৪ লেভেল কমে যায়, কারণ থাইরয়েড ফলিকুল ও ফলিকুলার সেল নষ্ট হয়ে যায়। যে সব রোগীদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল যেমন—লিউকোমিয়া, এইচআইভি-এইডস, রেইমাটিড অথেরাইসিস, কেমোথেরাপি, অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন, ক্রনিকডিজিজ, ক্যান্সার রোগে আক্রান্তদের ও বৃদ্ধদের ইনফেকশন হলে তা জটিল আকার ধারণ করবে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল বারী জানান, প্রতিরোধই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হতে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। আর সে জন্য প্রতিটি মানুষের উচিত মাস্ক ব্যবহার করা, ক্যারিয়ার মাস্ক ব্যবহার না করলে সেক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তি মাস্ক ব্যবহার করলেও ৭০ শতাংশ সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু ক্যারিয়ার ও সুস্থ ব্যক্তি উভয়ই মাস্ক ব্যবহার করলেও ১.৫ শতাংশ সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা। সেই সঙ্গে থাইরয়েড রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসার যত্মবান হওয়া উচিত।