গাজীপুরে কারখানা বন্ধ রেখে শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। দু’টি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। এতে সড়কে গণপরিবহন চালুর প্রথমদিনেই দীর্ঘযানজটে আটকা পড়ে গরমের মাঝে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, করোনা পরিস্থিতির কারনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাতাইশ রোড এলাকায় তানাজ ফ্যাশন লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার কয়েকটি বিভাগ বন্ধ রাখা হয়। কাজ না থাকায় কারখানা আংশিক খোলা রাখা হলেও বন্ধ থাকা অন্য বিভাগের শ্রমিকদের ১জুন হতে ছাঁটাই কার্যকর করে কারখানা ফটকে নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে ওইসব বিভাগের শ্রমিকরা কারখানা ফটকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেখতে পেলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল পৌণে ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে সড়কে গণপরিবহন চালুর প্রথমদিনেই ওই মহাসড়কের উভয়দিকেই শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বেলা পৌণে ১২টার মহাসড়কের উপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। প্রায় তিন ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধের কারণে প্রচন্ড গরমের মাঝে যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, করোনাকালে ছাঁটাই হলে নতুন চাকুরি পাওয়া যাবে না। ফলে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে। এজন্য তিনি শ্রম প্রতিমন্ত্রী, বিজিএমইএ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকদের ছাঁটাই না করার জন্য অনুরোধ জানান।

কারখানার মহাব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ, প্রশাসন ও কম্পলায়েন্স) মো. ফজলুল হক স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ সারা বিশে^ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন মহামারী রূপ ধারণ করায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা কর্তৃক ক্রয়াদেশ স্থগিত/বাতিল হওয়া এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কারখানাটি ২৯মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছিল। তবে সরকার ও বিজিএমইএ’র নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে জরুরী প্রয়োজনে কারখানার কিছু বিভাগ আংশিকভাবে ২৭এপ্রিল হতে খোলা রাখায় হয়। কারখানার যে সকল বিভাগ (৬০দিন) বন্ধ ছিল কাজ না থাকায় ওইসব বিভাগের শ্রমিকদের ১জুন থেকে ছাটাই করা হলো। ৪ জুন তাদের শ্রমআইন অনুযায়ী সকল পাওনাদি বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হবে। এজন্য তাদের আর কারখানায় আসার প্রয়োজন নেই।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ আগামী ৪জুন শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেয়। এতে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত কওে কারখানা এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে জিএমপি’র টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি জানান, মহানগরীর গাজীপুরার সাতাইশ রোড এলাকার ভিয়েলা টেক্স কারখানার শ্রমিকরা একইদিন সকালে বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। প্রতিদিনের মতো ওই কারখানার শ্রমিকরা সোমবার সকালে কাজে যোগ দিতে যায়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ পূর্বের কোন নোটিশ ছাড়াই শ্রমিকদেরকে কারখানায় প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।