মাত্র তিন মাসের মধ্যে পুরোপুরি করোনামুক্ত হয়েছে নিউজিল্যান্ড। আর এই সাফল্যের একমাত্র কারণ কঠোর লকডাউন। পুরো বিশ্বের মধ্যে সম্ভবত নিউজিল্যান্ডই সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ পালন করেছে। আর সেজন্যই দেশটি এখন পুরোপুরি করোনামুক্ত।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এর মাত্র ৩ মাস ১০ দিন পর স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন জানিয়েছেন যে, দেশটিতে আর একজনও সক্রিয় করোনা রোগী নেই। শেষ যিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনিও রোববার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জাসিন্ডা আর্ডার্ন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে আমরা নজিরবিহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, যত তাড়াতাড়ি এবং যত নিরাপদে সম্ভব এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া। তবে কঠোর লকডাউনের কারণে নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য এখন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার মধ্যরাত থেকেই করোনা সতর্কতা এক প্রকার উঠিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। পুরোপুরি খুলে দেয়া হচ্ছে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। শুধু সীমান্তে নজরদারি ছাড়া আর কোনও বিধিনিষেধ থাকছে না। আসলে তিন সপ্তাহ আগেই নতুন করে সংক্রমণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। গত ১৫ মে শেষবার নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছিল দেশটিতে। আমেরিকা, যুক্তরাজ্যের মতো শক্তিধর দেশগুলো যা করতে পারেনি, ওশেনিয়া মহাদেশের ছোট একটি দেশ তা কীভাবে করে দেখালো? নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তার ভাষায়,শুরুতেই কঠোর লকডাউন এবং বেশি বেশি করোনা পরীক্ষাই তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।

নিউজিল্যান্ড সরকার শুরুতেই সাত সপ্তাহের কঠোর লকডাউন জারি করে। কাউকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। জরুরি সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে টেস্ট করানো হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেই পাঠানো হয়েছে আইসোলেশনে। আর এভাবেই করোনাকে জয় করেছে নিউজিল্যান্ড।

এদিকে দেশটিতে এখন কোনও ভাইরাসের অস্তিত্ব নেই মানে ভবিষ্যতে আর হবে না, এমনটা নিশ্চিত হতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। নিউজিল্যান্ডের পাবলিক হেল্থ ইউনিভার্সিটি অব ওটাগোর অধ্যাপক মাইকেল বেকার বলেছেন, লেভেল-১ সতর্কবার্তায় নামিয়ে আনার অর্থ আমরা দেশ থেকে কোভিড-১৯ দূর করতে সফল হয়েছি। তবে এটা শুধু প্রথম যুদ্ধে জয়। কিন্তু এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হবে। মহামারির ভয় ততদিনই থাকবে, যতদিন বিশ্বে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব থাকবে।