করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুবরণকারীদের প্রতি শোক জানালো জাতীয় সংসদ। একই সঙ্গে ঢাকা-৫ আসনের সরকার দলীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লাসহ বিশিষ্টজনের মৃত্যুতেও সংসদ শোক জানিয়েছে। শোক জানিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নিহতদের জন্যও। বুধবার (১০ জুন) অষ্টম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে এ শোক জানানো হয়।

এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে শোক প্রস্তাব আনলে এর ওপর আলোচনা হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ছয় জন সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এই সময় সংসদ সদস্যসহ মারা যাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং করোনাযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়। এরপর সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়। চলমান সংসদের কোনও সদস্যের মৃত্যুর পর সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর অধিবেশন মুলতবি রাখার রেওয়াজ আছে।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লাসহ মারা যাওয়া সবার প্রতি শোক জানান। করোনাকালে মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিকে দেখতে যেতে না পারার জন্য তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন।

করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সমাজের অনেকে মৃত্যুবরণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আজ এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলেছে, যেসব ব্যক্তি মারা গেছেন আমরা তাদের দেখতে যেতে পারিনি। তাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে যাবো সেই সুযোগটা নেই।’

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা নিজেরা শঙ্কিত। এজন্য হাবিবুর রহমান মোল্লাসহ নিকটজনদের মৃত্যুর পর আমরা জানাজায় যেতে পারিনি। হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য বড় দুঃখের। ইনশাআল্লাহ আমরাই করোনাযুদ্ধে জয়ী হবো।’

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আজ সারা পৃথিবী করোনার ঝাপটায় বিপর্যস্ত। সংক্রমণের কারণে নিকটজনদের মৃত্যুতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেনি। নিকটজনের মৃত্যুতে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো, কিন্তু দাফন-কাফন তো দূরের কথা, তাদের কুলখানিতেও যেতে পারিনি। বাসায় বসে দোয়া করেছি।’

এর আগে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ওয়ালিউর রহমান রেজা (গাইবান্ধা-৫), সংবিধানে স্বাক্ষরকারী অন্যতম সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান (টাঙ্গাইল-২), মমতাজ বেগম (টাঙ্গাইল-২), আলহাজ্ব মকবুল হোসেন (ঢাকা-৯), জহিরুল ইসলাম (কক্সবাজার-১), কামরুন নাহার পুতুল (বগুড়া-জয়পুরহাট সংরক্ষিত), আনোয়ারুল কবির তালুকদার (জামালপুর-৪), এম এ মতিন (চাঁদপুর-৫), সৈয়দ রাহমাতুর রব ইরতিজা আহসানের (বরগুনা-২) মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। ইমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা রাব্বী, সাবেক প্রধান হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর স্ত্রী সাহান আরা বেগম, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের পুত্রবধূ মোসাম্মৎ মরিয়ম বেগম, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বড় ভাই এবিএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের বাবা সুশান্ত সরকার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান সাদাত হোসাইন, জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সানবিম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর, একুশে পদকপ্রাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মজিবর রহমান, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী, সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক গোলাম রাব্বানী হেলাল, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরকার আজাদ রহমান, ব্যবসায়ী আব্দুল মোনেম এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নারী ক্যামেরাপার্সন রোজিনা আক্তারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

সংসদে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে মারা যাওয়া ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন-পুলিশের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ীসহ যারা মারা গেছেন তাদের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে নিহতদের স্মরণে সংসদ শোক প্রকাশ করে।

শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের আ স ম ফিরোজ, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির সচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা অংশ নেন।