গাজীপুরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে টেস্ট কেস হিসেবে জেলার কালীগঞ্জ পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। কঠোরভাবে লকডাউনের মাধ্যমে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে জন চলাচল। এ টেস্ট কেস সফল হলে দেশের সর্বত্র তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডকে অধিক ঝুকি পূর্ণ (রেড জোন) ঘোষণা করেছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম। শুক্রবার রাত ১২টা (১৩জুন) হতে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে। এ আদেশের প্রেক্ষিতে ওই এলাকার সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যাংক, হাটবাজার, দোকান পাট বন্ধ থাকবে। শুক্রবারের এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে ওই তিনটি ওয়ার্ড পুরোপুরি লক ডাউন থাকবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারবে না।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কালীগঞ্জ পৌরসভার ওই তিনটি ওয়ার্ডে ৩০ হাজার লোক বাস করেন। গত ১৪দিনে এ তিনটি ওয়ার্ডের ১৯জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এপর্যন্ত ওই তিনটি ওয়ার্ডে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৬৭জন। এখানে আক্রান্তের হার প্রতি লাখে ৬৩ভাগের বেশী। অথচ মহানগরের বাইরের এলাকায় প্রতিলাখে ২০জনের বেশী হলে ওই এলাকা সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী রেডজোনের অন্তর্ভক্ত হবে। অপরদিকে মহানগর বা সিটি কর্পোরেশনের যে এলাকায় করোনা আক্রান্তের হার প্রতি লাখে ৬০জনের বেশী, সেই এলাকাকে রেড জোন (অধিকঝুকিপূর্ণ এলাকা) ঘোষণার বিধান রয়েছে।

তিনি আরো জানান, এসময় এ এলাকায় ইমারজেন্সী সার্ভিস বাদে সকল প্রকার গণপরিবহণ, দোকানপাট, অফিস ও লোক চলাচল বন্ধ থাকবে। কাউকে ওই এলাকায় প্রবেশ ও বাহির হতে দেওয়া হবে না। সকল শাখা রোডগুলো বন্ধ থাকবে। নিয়ন্ত্রণ করা হবে জন চলাচল। এজন্য ওই তিনটি ওয়ার্ডের কাপাসিয়া মোড়, বালিগাঁও’র শেষ মাথায় এবং কদমতলী এলাকায় তিনটি চেকপোস্ট থাকবে। জরুরী প্রয়োজনে কাউকে ওই এলাকা হতে বের হতে হলে চেকপোষ্ট হয়ে বের হতে হবে। রোগী বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও ঔষধের দোকান খোলা থাকবে। তবে রিক্সাভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে তরিতরকারিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা বাজার ও মাছ বিক্রি ও সরবরাহ করা হবে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, শিল্পাঞ্চল হওয়ায় গাজীপুরে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের হার অনেক বেশী। কিছু এলাকা বাদে এ জেলার অধিকাংশ এলাকাই এখন ঝুকিপূর্ণ (রেড জোন)। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়নগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ মহানগরের মোট ৫টি অধিক ঝুকিপূর্ণ (রেড জোন) এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ টেস্ট কেস সফল হলে সরকারের পক্ষ থেকে তা দেশের সর্বত্র বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডকে অধিক ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে রাত ১২টা হতে ওই এলাকা সিল্ড করে দেওয়া হচ্ছে। জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া কেউ ওই এলাকার বাইরে যেতে পারবেনা বা প্রবেশ করতে পারবে না। এ আদেশের প্রেক্ষিতে ওই এলাকার সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যাংক, হাটবাজার, দোকান পাট বন্ধ থাকবে। তবে মাছ, তরকারি-সব্জি, চাল-ডাল-তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী রিক্সাভ্যানের মাধ্যমে ওই এলাকায় বিক্রি ও সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও মোবাইল ফোনে অর্ডার গ্রহণ করে গ্রাহকের বাড়িতে ঔষধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।