কলাপাড়ায় হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের মাঝে আশ্রয়ের জন্য দেয়া আবাসন কেন্দ্রগুলো এখন একেবারেই জীর্ণদশা হয়ে পড়েছে। সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তান্ডবে বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ আবাসন কেন্দ্রের ঘরের চাল ও বেড়ার টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আবাসনের প্রতিটি কেন্দ্রে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা এখন অনোপুযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ওইসব আবাসনের খেঁটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষগুলো ঝড়-বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

সরেজমিনে আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, নীলগঞ্জ আবাসনে ২৮০টি পরিবার বসবাস করে আসছে দীর্ঘ বছর ধরে। এ পরিবারগুলো তিনটি ব্যারাকে বিভক্ত। প্রথম ব্যারাকটিতে ৮০ টি পরিবার, দ্বিতীয়টিতে ৭০ টি পরিবার ও তৃতীয় ব্যারাকে ১৩০ টি পরিবার। এই পরিবারগুলোর বেশির ভাগই দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। আন্ধারমনিক নদীর তীরে অবস্থানের কারণে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ ছোট খাটো ঝড়-বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করতে হয় তাদের। বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে কোন রকমে বসবাস করলেও দিনেদিনে ভগ্নদশায় পরিনত হচ্ছে। নীলগঞ্জ আবাসনের বাসিন্দা সুশান্ত হালদার বলেন, ঘরের চাল নেই তাই পলিথিন টানিয়ে থাকতে হয়। তার পরও ঘরের মধ্যে বৃষ্টির পানি ঢুকছে। এ ঘর গুলো নির্মানের পর আর মোরামত করা হয়নি। এ আবাসনের প্রত্যেটি ঘরেই একই অবস্থা। মো.ইমাম হোসেন বলেন, ঘরে বসবাসের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে গেছে। আবাসনের গৃহবধূ হামিদা বেগম বলেন, বৃষ্টির সময় রান্না করতে পারছিনা। পানি পড়ে সবকিছুই ভিজে যায়। বাইরে কোন জায়গা নাই তাই বাধ্য হয়ে এখানে থাকতে হয়। একই আবাসনের দিনমজুর আহসান উল্লার স্ত্রী হাওয়া বিবি বলেন, এই ঘর টুকুতে দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে থাকি। কয়েকদিন আগে বন্যার বাতাসে ঘরের চাল উড়ে গেছে। এর পর সুদে টাকা এনে ঘরে টিন লাগাইছি।

এদিকে ফতেপুর আবাসন কেন্দ্রটি সম্পূর্ন জরাজীর্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবাসন তৈরি করার সময় নলকূপের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে তার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। ব্যারাকের টিন, লোহার এ্যঙ্গেল অনেক আগেই খোয়া গেছে। অনেক ঘরের এ্যঙ্গেল ও টিনে মরিচা ধরে গেছে। যার কারণে এখন অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে ঘরগুলো। আবার কিছু কিছু ব্যারাকে মানুষজন না থাকায় গরু-ছাগল রাখতে দেখা গেছে।

মহিপুর ইউনিয়নের নিজ শিববাড়িয়া আবাসন কেন্দ্রটির অবস্থা আরো ভয়াবহ চিত্র এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় সিডরের আঘাতে এ অঞ্চল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরফলে অনেকেই গৃহহারা হয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, সরকার হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারকে মাথা গোঁজার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব আবাসন কেন্দ্রগুলো নির্মান করে দেয়। বিধিবাম ২০০৮ সালে ঘর্নিঝড় নার্গিস, ২০০৯ সালে আইলা, ২০১৩ সালে মহাসেন, ২০১৫ সালে কোমেন, ২০১৬ সালে রোয়ানু, ২০১৭ সালে মোরা, ২০১৯ সালে ফণী, ২০১৯ সালে বুলবুলের প্রভাবে আবাসন কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মেরামত করা হয়নি ঘরগুলো। কিন্তু সঠিক কোন তদারকি না থাকায় ক্রমশই বেহালদশায় পরিণত হয়। সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন আম্ফান আবাসন কেন্দ্রগুলোর ঘরের চাল ও বেড়ার টিন উড়িয়ে নিয়ে যায়।

নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সিডরের পরবর্তি সময় এ ইউনিয়নে ৬ টি আবাসন কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। বর্তমানে ঘরগুলো সম্পূর্ন জড়াজীর্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব আবাসন কেন্দ্রের আধিকাংশ ব্যারাকে লোকজন নেই। যারা আছে তারাও বৃষ্টির সময় র্দূভোগ পেহাচ্ছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, আম্ফানের প্রভাবে আবাসনগুলোতে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট তহশিলদারকে বলা হয়েছে। আবাসনের ঘর মেরামতের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান এবিষয়ে বলেন, আবাসনগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার, অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সমস্যগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি