বেতন বকেয়া থাকার পরেও অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার চার দিন পর শিক্ষার্থীদের এই ক্লাসে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ব্লক করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ এর সত্যতা স্বীকার করে বলছে, বার বার নোটিশ দেওয়ার পরেও যেসব অভিভাবক বেতন পরিশোধ করেননি তাদের সন্তানদের আর অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের প্লে পেন স্কুলে এক হাজার ৬০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। আর শিক্ষক আছেন আড়াই শতাধিক।

১৪ জুন থেকে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশের অনলাইন ক্লাস শুরু করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে যাদের বেতন বাকি তাদের ১৮ জুন থেকে এই ক্লাসে আর অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।  সরকারী নিয়ম না মেনে নিজের মতো করে চালাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান। এনিয়ে দিন দিন বাড়ছে অবিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের মাঝে নানান ক্ষোভ ও দুরত্ব। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বারবার বেতনের জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। আর এই অভিযোগ করছেন অবিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ তিন মাস করোনার কারণে স্কুলের কোন ক্লাস হয়নি। চালায়নি কোন কার্যক্রম। তার পরেও মাসিক বেতন পরিশোধের চাপ আসছে বার বার। এমনকি গুগল ক্লাস থেকেও শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্লেপেন স্কুলের বিরুদ্ধে এধরনের নানান অভিযোগ এখন শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মুখে মুখে।

প্রসঙ্গত, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ এর কারণে সরকারী নির্দেশনায় স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়। এ কারণে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো কিছুদিনের মধ্যে অনলাইন ক্লাস চালু করলেও প্লেপেন স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার কার্যক্রম চালায়নি। বরং তারা নিয়মিত স্কুলের মাসিক বেতন পরিশোধের জন্য অভিবাবকদের চাপ দিয়ে আসছিলেন।

স্কুলের মাসিক বেতনের অনলাইন পোর্টালে গিয়ে দেখা যায়, এপ্রিল ও মে মাসের বকেয়া বেতনের জন্য জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিবাবকেরা তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন বিশেষ বিবেচনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্লেপেনের অফিসিয়াল ইমেইল আইডিতে ইমেইল করেন।

এদিকে প্লেপেন গার্ডিয়ান এসোসিয়েশন নামে অভিবাবকদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ৩০ মে বিশেষ বিবেচনার জন্য এই ইমেইল করা হয়। কিন্তু মাসিক বেতনের কোন প্রকার সুরাহা না করেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৪ জুন থেকে স্বল্প পরিসরে শুধুমাত্র ক্লাস এইট থেকে এ লেভেল পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস শুরু করে।
অবিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বকেয়া বেতন বাকি থাকার কারণে বৃহস্পতিবার অনেক শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ দেয়া হয়নি। তাদেরকে আইডি দিয়েও কেবল মাত্র বেতন না দেয়ার কারণে বাদ দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অবিভাবক বলেন, বেতন পরিশোধের জন্য প্রতিনয়তই মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। এমনকি জরিমানা ছাড়া বেতন পরিশোধের জন্য ২৫ জুন পর্যন্ত সময়ও বেধে দেয়া হয়। কিন্তু সময় পার হবার আগেই আমার সন্তানের ইউজার আইডি ব্লক করে তাকে ক্লাস করতে দেয়া হয়নি। আমরা এ বিষয়ে এখন সরকারের কাছে অভিযোগ করা ছাড়া কোন পথ পাচ্ছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্যএকজন অবিভাবক বলেন, সবার আর্থিক অবস্থা তো সবসময় এক থাকে না। করোনা পরিস্থিতিতে অতি উচ্চবিত্তরাও সমস্যায় আছেন। সন্তানদের সব পরিস্থিতিতে আগলে রাখার চেষ্টা করছি। আজকে তাকে অনলাইন ক্লাসে ঢুকতে না দেয়ায় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। একজন শিশুকে এভাবে মানসিক ভাবে কষ্ট দেয়ার দায় কে নিবে। এ জাতীয় নানান অভিযোগের ব্যাপারে প্লেপেন স্কুলের প্রিন্সিপাল সোরাবন তহুরাকে অন্তত ১০ বার তার মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তিনি ফোন কেটে দেন।

একটি ক্ষুদে বার্তায় একটি অশোভন শব্দ ব্যবহারের ব্যাপারে স্কুলের এডমিন অফিসার ওয়াহিদা বলেন, আমরা বেতন দেয়ার ব্যাপারে বার বার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু কোন অশোভন ভাষা ব্যবহার করি নাই। তবে এই স্কুল ও এর শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন রটনা রয়েছে বলেও সংশ্লিস্টরা জানিযেছেন।

উল্লেখ্য, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে করোনাকালীন বন্ধে ৫০ শতাংশ বেতন মওকুফের জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত ১৫ জুন (সোমবার) সরকারকে আইনি নোটিশ দেয় হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির সত্ত্বর ব্যবস্থা চেয়ে ই-মেইলে এ নোটিশ পাঠান। কিন্তু নোটিশ পাঠানো হলেও বেশিরভাগ স্কুলই তা মানছে না বলে জানান মহিদুল কবির।

এদিকে প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল, সরকার স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে কোন ধরনের অতিরিক্ত ফি না নিতে বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু এর পরেও প্লেপেন স্কুল ২০১৭ সালে সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি বাবদ ২৬ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।