“করোনা এখন একটা পরিচিত শব্দ। একটা আতংকের আর ভীতিকর নাম। এই করোনা এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আর চারটি প্রশ্ন।

রোগের লক্ষণ
চিকিৎসা
প্রতিরোধ বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
এবং ভ্যাকসিন

এই রোগের জীবাণু মাত্র 7 থেকে 8 মাস আগে চিহ্নিত করা হয়। এই রোগ কিছু ভাইরাস বাহিত রোগের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও এই রোগের লক্ষণ উপসর্গ একটু ভিন্ন। জ্বর, মাথা ব্যাথা বা শরীর ব্যাথা, কাশি, গলা ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট এসব অনেকাংশে দেখা যায়। তবে অনেকের কোনো লক্ষণ থাকে না। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির আরো অন্য কোনো রোগ থাকলে সেই রোগ আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। আক্রান্ত হচ্ছে নব জাতক থেকে বৃদ্ধ। তবে মাঝ বয়স রোগীদের আক্রান্ত হবার মাত্রা বেশি এর পর বৃদ্ধ।

প্রায় আশি শতাংশ রোগী পুরো ভালো হয়। বাকিদের সংক্রমণ বা শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নিতে হয়। এর মাঝে 2 শতাংশ রোগী মারা যায়। পুরুষ রোগী মারা যায় বেশি।

ব্যাকটেরিয়া থেকে কোনো রোগ হলে সেটার জন্য antibiotic খেতে হয়। আর তেমনি ভাইরাস এর রোগের জন্য antiviral। কিন্তু এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনও কোনো কার্যকর ওষুধ তৈরি হয় নি। যেসব ওষুধ দিয়ে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা হচ্ছে, সেই ওষুধ কিন্তু আগে অন্য রোগের জন্য ব্যবহার হতো। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই রোগের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ডাক্তার এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সময়ের সাথে সাথে ওষুধ এর গাইড লাইন বদল করেছে। আর যেসব ওষুধ দিতে বলা হয়েছে তার সবই কিন্তু আগে অন্য রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

চিকিৎসক চিকিৎসা করছেন রোগীর শারীরিক উপসর্গ লক্ষণ ভেদে। তবে যে বিষয় সব থেকে বেশি আতঙ্কিত করছে সেটা হল শ্বাসকষ্ট। এটা যাদের শুরু হয় তাদের শ্বাসের ব্যায়াম আর পাশাপাশি অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। যাদের এই অক্সিজেন দিয়েও শরীরে অক্সিজেন মাত্রা নুন্যতম অবস্থা পর্যন্ত রাখা যাচ্ছে না , তাদের কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নেবার ব্যাবস্থা করা হয়। যেটা আমরা ভেন্টিলেশনে এর নামে চিনি।

রোগী এই অবস্থায় চলে গেলে ফিরে আসবে তো! ভালো হবে তো? এক কথায় এর উত্তর দেয়া যাবে না। রোগী এই অবস্থায় চলে গেলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গের ভিতরে নানা পরিবর্তন আসতে থাকে। সব অঙ্গের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে গেলে অনেক কিছু হিসেবের মাঝে আনতে হয়। অনেক ওষুধ দিতে হয়। যাদের আগে কোনো রোগ ছিল না অথবা যাদের বয়স খুব বেশি না তাদের কিছুটা ভালো হবার সম্ভাবনা বেশি। আর যাদের অন্য রোগ থাকে বয়স বেশি তাদের ঝুঁকি ও তেমনি বেশি। চিকিৎসা বা ওষুধ নিয়ে নানা মত থাকলেও এর বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কিন্তু সারা বিশ্বে একই।

নূন্যতম দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল ( এখন এটা 6 ফিট)।
মাস্ক ব্যাবহার ( কাপড়ের, সার্জিক্যাল, kn95, n 95)।
চোখে মুখে স্পর্শ করার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়া। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করা।
প্রয়োজনে গ্লাভস আর গগলস ব্যবহার করা।

ভ্যাকসিন এর ব্যাপারে বলার আগে একটু জিনিস মনে করিয়ে দেই। দেশে পাঁচ বছরের নিচে সকল শিশুকে টিকা দেওয়া হয়। ভালো করে খোজ নিলে দেখা যায় এসব টিকা বহু বছর ধরে চলা গবেষণার ফল। আর এই ভাইরাস এলো মাত্র কয়েক মাস। তাই এর ভ্যাকসিন পেতেও লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমরা আশাবাদী হতেই পারি যে এই রোগের অব্যর্থ ওষুধ আর ভ্যাকসিন আমরা অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা তৈরি করবেন।

অতএব আশা রাখি, সতর্ক থাকি। সর্বোপরি বিশ্বাস রাখি ।

 

সেরাজুস সালেকিন।
বক্ষ ব্যাধি সার্জন থোরাসিক সার্জারি বিভাগ
সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল।