জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল বলেন, ‘এবারের বাজেটের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমেই বোঝা যায়-এটা স্রেফ একটা সংখ্যানির্ভর মোহাবিষ্ট ধুম্রজাল সৃষ্টিকারী বাজেট। ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি অপরিণামদর্শী ও বাস্তবতাবিবর্জিত গতানুগতিক বাজেট পাশ হয়েছে। যাকে অর্থনীতিবিদরা স্বপ্নবিলাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, এসএমই, গ্রামীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় বরাদ্দের ফলে এ দেশের জনগণের মাঝে সীমাহীন হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যদিও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাহীন একটি একদলীয় সরকারের আচরণে কাল্পনিক সাফল্যের দিবাস্বপ্ন দেখানোর অপপ্রয়াসই স্বাভাবিক। জনগণের কাছে ন্যুনতম জবাবদিহিতাহীন, আমলাচালিত, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট সরকারের কাছে এমন বাজেটই প্রত্যাশিত। এই বাজেট আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাজেট ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। অথচ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপি সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাজেট ছিল মাত্র ৪০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিএনপি সরকারের শেষ অর্থবছরের তুলনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খরচ বেড়েছে সাড়ে নয় গুণ। অর্থমন্ত্রী সরকারি ব্যয় হ্রাস করার যে ঘোষণা বাস্তবায়ন করছে এটি তার একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টান্ত মাত্র।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, আয় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই ঘাটতি ৫ শতাংশ। সংখ্যানির্ভর মোহাবিষ্ট এই বিরাট বাজেটের ৬৬ শতাংশ আসবে রাজস্ব আয় থেকে- যা একেবারেই অসম্ভব।’

সরকারের বিগত বাজেটগুলোর মতো এ বাজেটেও লুটেরা সরকারের ধনিকশ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। উদাহরণ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কালো টাকার মালিকদের কথায়ই শুনলেন অর্থমন্ত্রী। কালো টাকার মালিকদের টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন এমন সমালোচনা থাকলেও তা তোয়াক্কা করেনি সরকার। খসড়া বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছিল কালো টাকার মালিকেরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলে ওই টাকা ৩ বছর বাজারে ধরে রাখতে হবে। অর্থবিল পাশের দিন এ সুযোগ কালো টাকার মালিকদের পক্ষে আরেকটু ঢেলে দেওয়া হলো। এটা কমিয়ে এখন করা হয়েছে ১ বছর। সকলেই বিশ্বাস করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের টাকা সাদা করে তা পুনরায় বিদেশে পাচারের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বলেছিল কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে সে একজন সরকারি রোগী। অথচ সংক্রমণ যখন বৃদ্ধি পেল এমন সময়ে সরকার করোনা টেস্ট ফি ২০০ ও ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ জাতীয় ফি আদায় সারা বিশ্বেই বিরল।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বাজেট করোনার সময়ে বীভৎস স্বাস্থ্য সংকটে পড়া মানুষের নাভিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবার বাজেট। এই বাজেট করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া কোটি কোটি অনাহারী মানুষকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার বাজেট। এই বাজেট কৃষিকে ধ্বংস করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলার বাজেট। এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার না করে আরও গভীর মন্দায় ফেলে দেওয়ার বাজেট। সর্বোপরি এই বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্পদ লূটপাটকারীদের আরও সুযোগ বৃদ্ধির বাজেট।’