চিকিৎসার নামে প্রতারণা, সরকারের সাথে চুক্তি ভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদকে নিয়ে ব্রিবতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে আ্ওয়ামী লীগ। ফেইসবুক পেইজে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হিসেবে শাহেদ নিজের পরিচয় দিয়েছেন।সরকার প্রধান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, সরকারি আমলাদের সঙ্গে নিজের অসংখ্য ছবি তিনি সেখানে শেয়ার দিয়েছেন।

২০১৬ সালে গঠিত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটি ২৪ নং সদস্য হিসেবে মোহাম্মদ শাহেদের নাম পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে মেয়াদ শেষ হওয়া ওই উপকমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অ্যাম্বাসেডর মো: জমির এবং সদস্য সচিব ছিলেন ও ড. শাম্মী আক্তার। এই উপকমিটির মাধ্যমেই শাহেদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হন। আগে দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না থাকলেও শাহেদ কীভাবে সরাসরি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হয়ে গেলেন? অনুসন্ধানে জানা গেছে, কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমিরের সঙ্গেই শাহেদকে দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। শাহেদের গাড়িতে করে অ্যাম্বাসেডর মো: জমির বিভিন্ন সময় পার্টির কর্মকাণ্ড যোগ দিতেন, এমনকি বৈঠকগুলোতেও আসতেন। চেয়ারম্যানের ঘণিষ্ঠ লোক হিসেবেই আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির ২৪ নং সদস্য একজন হিসেবে শাহেদ অন্তর্ভুক্ত হন।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহেদ বর্তমান কমিটির কোনো পদে নেই। গত কমিটিতে সে সদস্য ছিল। এখনও তো আমাদের কমিটি অনুমোদন হয়নি। তাহলে কীভাবে বলবেন সে আমাদের কমিটির সদস্য। শাহেদকে বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, মিটিংয়ে ৩০-৪০ জন উপস্থিত থাকে, অন্য সদস্যদের মত আমি তাকেও চিনি।আমি কেন তাকে আনতে যাব!

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, শাহেদ বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি বা উপকমিটির সদস্য নয়। আগের যে কমিটি ছিল ওটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য বলে প্রচার করা হচ্ছে। এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। তিনি কোনো কমিটিরই সদস্য নন। কারণ নতুন কোনো উপকমিটি অনুমোদন পায়নি। এমনকি কোনো খসড়া কমিটিও আমরা করিনি।

তিনি বলেন, আগে কমিটির খসড়া তালিকা তৈরি করব তারপর দলীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হবে; এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে অনুমোদন দেবেন। কিন্তু যেখানে কমিটি জমাই দেওয়া হয়নি, সেখানে এমন যারা উপকমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন, তারা মিথ্যা পরিচয়ই দেন।

শাহেদ কি করে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন, জানতে চাইলে ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, আমাদের মধ্যে একজন সম্মানিত ব্যক্তির মাধ্যমে সে বৈঠকে আসত, তখন আমি তো তাকে বৈঠক থেকে বের করতে পারি না।

আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী এমনকি তার সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির হতেন। সেই সুযেগে হয়তো কোনো ছবি তুলতে পারেন। এখন সবার হতেই মোবাইল ফোন আছে, যে কেউ কোনো অনুষ্ঠানে চাইলেই ছবি তুলতে পারেন। ছবি তুললেই তো কেউ সংগঠনের হয়ে যান না।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক বলেন, কমিটিতে জায়গা পেতে শাহেদ নানারকম চেষ্টা তদবির করেছেন।কিন্তু শুরু থেকেই তাকে টাউট মনে হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নেতাকে দিয়ে তদবির করার কারণে তার প্রতি সন্দেহ আরো বাড়ে। তাই কমিটি করলে শাহেদকে কমিটিতে রাখব না বলেই আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও চলতি বছরের শুরুতে কমিটি জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে আমি জমা দিতে পারিনি। এরপর তো করোনা শুরু হয়ে গেল।

প্রসঙ্গত, করোনা চিকিৎসার নামে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ ওঠেছে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে প্রায় চার হাজার করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে।করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে সাহেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী মোহাম্মদ শাহেদ বর্তমানে পলাতক আছেন। তাকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাবের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ‘প্রকৃতপক্ষে একজন ধুরন্ধর, অর্থ লিপ্সু এবং পাষণ্ড’।