যুতসই মানুষ হলেই স্বচ্ছ মানসিকতার অধিকারী হওয়া যায়না। অন্তরে লালিত স্বচ্ছতা কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেই অন্যের মনে স্থান করে নেওয়া সম্ভব। চিত্রা হরিণের ডাগর চোখের মায়ায় পড়ে সান্নিধ্যে লাভ করা গেলেও সুচারু সিং এর আঘাত থেকে পরিত্রাণ পেতে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখাই উত্তম, নইলে কথিত বিশ্বস্ততার আঘাতে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আয়ত্ত্ব করার প্রয়াসে বহুমাত্রিক অবয়ব নিয়ে মানুষের আত্নপ্রকাশ এখন বাস্তবতাকে গ্রাস করেছে। সম্পর্কের সাথে স্বচ্ছতার দৃশ্যমাণ ঘাটতি অন্যের প্রতি আস্থার মাত্রাকে নিন্মমূখী করে বিধায় ক্রমান্বয়ে সম্পর্কের ভাটা পড়ে। মুহুর্তেই কথিত আত্নবিশ্বাসী মানুষটি সম্পর্কে কুৎসা রটনার জন্য আত্নপ্রত্যয়ী হয়ে পড়ে। কাউকে ভালভাবে না জেনে যেমন ভিত্তিহীন সমালোচনা করা উচিৎ নয়, ঠিক তেমনি প্রজ্ঞার সাথে বাস্তবতা খুজে না পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে মুহুর্তেই সম্পর্ক নষ্ট করা উচিৎ নয়। সময়ের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতার মাঝেই অবাস্তবতারা বসবাস করে। শুধু সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবেই অনেক কিছু অবাস্তব হয়ে যায়।

অন্যকে বোঝার শক্তি অনেকেই অন্তরে লালন করেনা। ভিকটিমের চেয়ারে বসে প্যারালাল রোল প্লে করার সামর্থ্য অনেকের না থাকলেও সমালোচনা করার বেলায় আমরা অনেকেই পারদর্শী। অন্যের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা বা ব্লেইম দেওয়ার অভিপ্রায়ে আসক্ত হওয়ার আগে একটু একান্তে ভাবা দরকার। শ্রেণী বিন্যাসের সাইকেলিং এ প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। প্রতিটি মানুষ কর্মক্ষেত্র সহ অন্যান্য জায়গায় পুরোপুরি সফল না হলেও তার নিজ পরিবারের কাছে সফল ও আদর্শিক একজন ব্যক্তিত্ব, সন্তানের নিকট আস্থাভাজন যোদ্ধা ও স্ত্রী নিকট সাবলম্বী মহানায়ক। ভিত্তিহীন সমালোচনা ও অপবাদের রেশ অন্যের জন্য মুখরোচক হলেও পরিবারের সদস্যদের জন্য মারাত্মক খারাপ প্রভাবের একটি কারণ হয়ে দাড়ায়, যেখানে ভিত্তিহীন পরিস্থিতির শিকার হয়ে বিনাদোষে কর্তাব্যক্তিকে অপবাদের সাথেই আপোষ করে চলতে বাধ্য করে। এটা মানুষের বিবেকবোধের ঘৃনিত বহিঃপ্রকাশ ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

বেশ্যা পাড়ায় বসবাস করলেও সকলেই বেশ্যা বনে যায়না। পরিবারতন্ত্রের মায়ার বাধনে একই প্যাভিলিয়নের নীচে কেউ বেশ্যাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের জীবন নামক যন্ত্রটাকে ফ্লুইড সরবারাহ করে, অন্যান্য সদস্যদের কেউবা সেই পাপ কর্মের অর্জিত অর্থে ক্রয় করা দুমুঠো অন্ন পেটে ধারণ করে একই ছাদের নীচে স্রষ্টার ইবাদতে মশগুল থাকে। কুরুচিপূর্ণ সমাজব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশে ঈমানদারকেও বেশ্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

আমরা যারা নিয়মিত ভালমন্দ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখালেখি করে যাচ্ছি, তারাও অনেকে কলম বেশ্যা হিসেবেই বিবেচিত। কারো কলমের খোচায় সমাজ সংস্কার হয়ে জীবনমানের উপর ভাল প্রভাব ফেলে, কারো কলমের খোচায় অন্যের সম্মানহানি ঘটার পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রকে উতপ্ত করে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে।বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় অথবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে রুটিরুজি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যারা বেশ্যা পল্লীতে বেড়ে উঠে, তাদেরকে আমরা ঘৃনিত অপবাদ দিতে অভ্যস্ত হলেও তাদের স্বীকৃত পেশায় নিয়োজিত করার কোন পদক্ষেপ নেইনা। এটা আমাদের বিবেকের বেশ্যাবৃত্তি ব্যতিত অন্যকিছু নয়।

ঠিক আমাদের মতো কলম বেশ্যাদের অতিআবেগী, ভিত্তিহীন ও অনুমাননির্ভর লেখালেখির প্রভাবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে। এ দায় কার? লিখতে জানলেই যেমন লেখক হওয়া যায়না, ঠিক তেমনই বাস্তবিক দুরদর্শিতা ও বিবেকবোধ না থাকলে লেখালেখি করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্টের জন্য উপকারী মানুষ হিসেবে নিজকে পরিচয় দেওয়া যায়না।

যত দোষ শুধু ঐ বেশ্যাপল্লীর মানুষগুলোর, যারা পরিস্থিতি নির্ভরতায় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য চেসটিটি বিক্রি করে জীর্ণ কুটিরে থাকতে বাধ্য হয়, কিন্তু আমাদের মতো কলম বেশ্যারা ধোয়া তুলসীপাতা, যাদের অনেকের ভিত্তিহীন ও অনুমাননির্ভর লেখায় ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র উতপ্ত হলেও চৌকস ও মেধাবী লেখক হিসেবে অর্জনের ঝুলিতে প্রতিদিন যোগ হয় বাহাবার গর্বিত সনদ।

আমাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, বাস্তব ও পরিশুদ্ধ বিবেকের দায়বদ্ধতা নিয়ে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের পাশে দাড়াই, না হলে কলমবেশ্যা ও ভিকটিম দেহ বেশ্যাদের মধ্যে পার্থক্য করতে বিবেকবানেরা পিছপা হবেনা।

মোস্তাফিজুর রহমান।
গোপালগঞ্জ।