খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ করা তিন সহোদরের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে চার জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সংঘর্ষের সময় ওই আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের ছোঁড়া গুলিতে তিন জন এবং ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নেতাদের পক্ষের একজনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫ জন। এরমধ্যে গুরুতর আহত সাত জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মশিয়ালী এলাকার ইস্টার্ন গেটে ওই সংঘর্ষ শুরু হয় এবং চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ঘটনাস্থলে নিহত দুজন হলেন- মশিয়ালী এলাকার নজরুল ইসলাম (৬০) ও গোলাম রসুল (৩০)। ওই দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ আট জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাইফুল ইসলামের (২৭) মৃত্যু হয়। আর গুলিবর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে রাত ২টার দিকে গণপিটুনি দিয়ে জিহাদ শেখ (৩০) নামে একজনকে হত্যা করে।

এলাকাবাসী সংঘর্ষের জন্য দায়ী করছেন খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া এবং তার দুই ভাই খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি জাফরিন ও মিল্টনকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মশিয়ালীতে ওই তিন ভাইয়ের একটি বাহিনী রয়েছে। তাদের সঙ্গে এলাকার ফকির গংদের দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। পূর্বশত্রুতার জেরে জাকারিয়া ও জাফরিন এলাকার নিরপরাধ মুজিবরকে অস্ত্রসহ পুলিশে ধরিয়ে দেন। খানজাহান আলী থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেলে মুজিবরকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর এলাকাবাসী জাকারিয়া ও জাফরিনকে জিজ্ঞাসা করতে গেলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। ওই সময় জাকারিয়া এবং তার দুই ভাই জাফরিন ও মিল্টন স্থানীয়দের ওপর গণহারে গুলিবর্ষণ করলে সংর্ঘষ বেধে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই তিন ভাইয়ের বাহিনীর ওপর স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। জনতার ওপর তাদের গুলিবর্ষণের ঘটনায় তা তীব্র আকার ধারণ করে। রাতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এলাকার ৩/৪টি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে জাকারিয়া, জাফরিন ও মিল্টনের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেন। এ সময় গণপিটুনিতে মারা যান জিহাদ শেখ।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতেই দুই গ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহতদের মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এখনো কোনো মামলা হয়নি।’

এ বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কানাই লাল সরকার বলেন, ‘ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যুর পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। আর ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী প্রতিপক্ষের জিহাদ নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’ এদিকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় রাতেই জাকারিয়াকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ। এলাকায় এখনো চাপা উত্তেজনা ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।