চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে অপরিকল্পিতভাবে নদীর কাছে নির্মিত একটি সাইক্লোন শেল্টার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মাত্র ১মাস আগে দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এছাড়াও কয়েক দিনের ভাঙনে প্রায় ২ শতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে আরও প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে।

উত্তরাঞ্চল থেকে নেমে আসা বন্যার পানির প্রবল স্রোতে গত ১০/১২ দিন ধরে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দেয়। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা ভিটেমাটি রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (১৭ জুলাই) দিনভর নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের ভয়াবহতা আরও ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে তিন তলা বিশিষ্ট নব-নির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার।

ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারের ঠিকাদার প্রতিনিধি ও ইউপি সদস্য পারভেজ গাজী রনি জানান, ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রায় ৭/৮ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং ইউনিয়নবাসীর কথা চিন্তা করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রচেষ্টায় ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। ভবনের সাইড সিলেকশনের সময় নদী এখান থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে ছিল।

একমাস আগে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়। তিনি আরও জানান, নবনির্মিত ভবনটিতে বিদ্যালয়ের ক্লাস চলার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।

নদী ভাঙনের শিকার স্থানীয়রা জানান, জোয়ার শেষে ভাটার সময়টাতেই ভাঙন শুরু হয়। তবে গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারই ভাঙনের ভয়াবহতা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। কারণ এবছর পাশ্ববতী শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ এলাকায় মেঘনার ভাঙ্গনরোধে যে বাঁধ দেয়া হয়েছে, তার পানি প্রবাহের মুখটি দেয়া হয়েছে রাজরাজেশ্বরের দিকে। এর ফলে ওই জেলার দেয়া বাঁধে ধাক্কা খেয়ে স্রোত এখানকার পাড়ে আঘাত হানছে।’

ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, আমরা কোনো ত্রাণ চাই না। আমাদের ভিটেমাটি রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী জানান, উজান থেকে প্রবল বেগে পানি চাঁদপুর হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হওয়ায় এখানকার চরাঞ্চলে মেঘনা ও পদ্মা নদীর মিলনস্থলে প্রচন্ড ঢেউ এবং ঘূর্ণিস্রোতের সৃষ্টি হয়। এ কারণে নদী আবারও বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।

গত ১০ দিনের ভাঙনে ইউনিয়নের রাজারচর, খাসকান্দি, জাহাজমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ২শতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে আরও প্রায় ৫শ’ বাড়িঘর ভাঙনের মুখে রয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী হযরত আলী বেপারী আরও জানান, ভাঙন শুরু হবার আগেই আমরা সাইক্লোন সেল্টার, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ মানুষের বাড়িঘর রক্ষায় আমি ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি।