স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মালিবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সিআইডি।

সিআইডি জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই বারবার ফাঁস হয়েছে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম এবং তার খালাতো ভাই জসীম- এ দুজন মিলে দেশব্যাপী গড়ে তুলেছিলেন একটি চক্র। চক্রটির মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী টাকার জোরে ভর্তি হয়েছে মেডিকেল কলেজগুলোয়। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে সিআইডির তদন্তকারী দল। সিআইডি আরও জানায়, সিআইডির সাইবার পুলিশের হাতে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ চক্রের ১১ সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়।

এছাড়া অধিদপ্তরের ক্ষমতাবান কর্তাদের মদদে প্রেস থেকে বহু বছর ধরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করতেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম। তার খালাতো ভাই জসিমের কাজ ছিল সারা দেশে ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়া। এ জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল তার। দেশব্যাপী চক্রটির প্রায় অর্ধশত সহযোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছে সিআইডি।

সিআইডি জানায়, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি, যার মধ্যে গ্রেপ্তার ছিল ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্তকালে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি।

গত ১৯ জুলাই পুলিশ এস এম সানোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিপিসির পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে একটি দল ওই দিনই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিমউদ্দিন ভূইয়া মুন্না (৪৫), পারভেজ খান (৩২) ও জাকির হাসান দিপুকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করতো।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ২০ জুলাই এজাহারনামীয় ১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সিআইডি। তাদের মধ্যে জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাইবার বিভাগের এডিশনাল পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হয়েছে। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম এবং তার খালাতো ভাই জসীম মিলে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। চক্রটির মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী টাকার জোরে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে সিআইডির তদন্তকারী দল।