গাজীপুরে শতভাগ ঈদ বোনাস ও বেতন পরিশোধের দাবীতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বুধবার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। এসময় শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় আধাঘন্টা অবরোধ করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ অন্ততঃ ৭জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ২রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ সালনা এলাকাস্থিত অক্সফোর্ড সার্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের চলতি জুলাই মাসের ১৫দিনের বেতন পরিশোধের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল বুধবার। পরেরদিন বৃহষ্পতিবার বোনাস পরিশোধের কথা ছিল। বুধবার সকালে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। এসময় শ্রমিকরা ঈদুল আজহার শতভাগ এবং গত ঈদুল ফিতরের বকেয়া ৫০ভাগসহ মোট দেড়শ’ ভাগ ঈদ বোনাস ও চলতি জুলাইয়ের পুরো মাসের বেতন পরিশোধের দাবী জানায়। তারা কর্তৃপক্ষের আশ্বাস না পেয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। উত্তেজিত কয়েক শ্রমিক কারখানার দরজা জানালার কাঁচসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। একপর্যায়ে সকাল পৌণে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইস্কান্দর হাবিব জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেয়। এসময় পুলিশ মহাসড়কের উপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাথর ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ অন্ততঃ ৭জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ার সেল (লং সেল) ও দু’টি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে প্রায় আধাঘন্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ওই মহাসড়কে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জুলাই মাসের ২০ দিনের বেতন ও ঈদুল আজহার শতভাগ এবং গত ঈদুল ফিতরের বকেয়া ৫০ভাগ বোনাস পরিশোধের ঘোষণা দেয়।

কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, কারখানার শ্রমিকদের কোন বকেয়া পাওনা নেই। তাদের সকল পাওনাদি নির্ধারিত সময়েই পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গত ঈদুল ফিতরের ৫০ ভাগ বোনাস শ্রমিকদের পরিশোধ করা হয়েছে। সরকার এবারের ঈদে শ্রমিকদের চলতি জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের ঘোষণা দেয়। অথচ শ্রমিকরা গত ঈদুল ফিতরের অবশিষ্ট ৫০ভাগ ও আসন্ন ঈদুল আযহার শতভাগসহ মোট দেড়শ’ ভাগ ঈদ বোনাস এবং চলতি জুলাইয়ের পুরো মাসের বেতনের টাকা পরিশোধের অযৌক্তিভাবে দাবী জানিয়ে আসছিল। তারা কারখানায় ভাংচুর করেছে। শ্রমিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ আসন্ন ঈদুল আযহার শতভাগ বোনাস ও জুলাই মাসের ২০দিনের টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেয়। ঈদুল ফিতরের বকেয়া ৫০ভাগ বোনাস ঈদুল আজহার পর পরিশোধ করা হবে।