গাজীপুরে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর এমপির মালিকানাধীন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দু’টি বেসরকারী হাসপাতালকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্সের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সোমবার দুপুর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযানকালে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং পাশর্^বর্তী সেবা জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টি সেন্টারকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব উম্মে সালমা তানজিয়া ও র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন সশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে সোমবার দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আউটপাড়া এলাকাস্থিত সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ হাসপাতালটির লাইসেন্স নেই। হাসপাতালটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের অপারেশন থিয়েটারে যেসব ঔষধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়া গেছে সেগুলো ৫-৬ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রী ব্যবহার করলে রোগীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এখানে এ প্রতিষ্ঠানের যে সব চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন তারাও বলেছেন এটা কাংখিত নয়।

তিনি বলেন, হাসপাতালটির ল্যাবে অনুমতি ছাড়া ব্লাড ট্রান্সফিশন করা হচ্ছে। রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হলে আইন অনুযায়ি লাইসেন্স করতে হবে। সেই লাইসেন্সটি তারা না নিয়েই রক্ত পরিসঞ্চালন করে আসছিলেন। রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হলে অবশ্যই রক্তের ৫টি টেস্ট করতে হবে। যেসব হাসপাতালের লাইসেন্স নেই সেই সব হাসপাতালের লাইসেন্স করার জন্য আগামি ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মন্ত্রনালয় সময় বেঁধে দিয়েছে। সে কারণে আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দিচ্ছি না। এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স নিতে ব্যর্থ হলে আমরা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিবো। কোনভাবেই অনিয়ম করতে দেওয়া যাবে না। সবার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা গ্রহীতাদের স্বার্থ যেন কোনভাবেই হানি না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আজকের এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

এদিকে বিকালে পাশর্^বর্তী চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সেবা জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় হাসপাতালটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী এবং রক্ত পরিসঞ্চালনের অনুমতি না থাকাসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সত্যতা পাওয়া যায়। এর প্রেক্ষিতে আদালত এ হাসপাতালটিকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব উম্মে সালমা তানজিয়া অভিযান চলাকালে বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান চলছে সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে কিনা এবং ঠিকমতো সেবা প্রদান করছে কি-না সেটা দেখার উদ্দেশ্যেই আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করছি। কোন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করা বা সিলগালা করা অথবা বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাচ্ছি আমাদের সেবা প্রতিষ্ঠানগুলি সুষ্ঠু নিয়মে চলুক, নিয়মের মধ্যে থাকুক, সেবা প্রার্থীদের সেবা নিশ্চিত করুক। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, বিভিন্ন মিডিয়ায় তা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোন অভিযান বন্ধ করা আমাদের কোন উদ্দেশ্য নয়। এটা মিডিয়া বলেছে যে অভিযান বন্ধ হয়ে যাবে নাকি। অভিযান বন্ধ হয়নি। আজকের অভিযানই তার প্রমাণ। এটা হচ্ছে একটি সমন্বিতভাবে আরো জোরদার করার জন্য। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঠিক রেখে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জনগণ যাতে সেবাটুকু পায় সেটা ঠিক রাখার একটি সমন্বিত ব্যবস্থার জন্য এ সার্কুলার জারি করা হয়েছিল।