কলাপাড়াসহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলে আবহাওয়ার বৈরীতা, জলোচ্ছাস, পানির তীব্রতা, উল্টো ¯্রােত কোনটিই কমার যেনো কোন লক্ষন নেই। মনি আমাবস্যা ও লাগাতার বর্ষায় জোয়ারের পানিতে শুধুই ভাসছে গ্রাম থেকে গ্রাম। সাগর, নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে লালুয়া ইউনিয়নের অন্তত: ১২টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পনিতে ডুবে গেছে বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়স্থল। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রতিনিয়তই দফায় দফায় পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে ফসল, জমি ও মাছের ঘের। মানবেতর জীবনযাপন করছে স্থানীয় মানুষজন। এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষই এখন অনেকটা জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। মহিপুরের নিজামপুর পয়েন্টের বাঁধটি এখন রয়েছে চরম হুমকীর মুখে। জোয়ারের পানির তীব্রতায় যে কোন মুহুর্তে বাঁধটি ছুটে ৫টি গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে আশংকাা স্থানীয়দের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অমাবস্যার প্রভাবে লালুয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে মুহুর্তের মধ্যে প্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। বানভাসী অসহায় মানুষগুলোর চোখে-মুখে চরম অনিশ্চয়তাল ছাপ, হারাম হয়ে গেছে তাদের ঘুম। অস্বাভাবিক ¯্রােতের টানে মানুষ ভেসে বেড়ালেও তাদের আর্তনাদ কেউ শুনছে না। দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের যোগাযোগ । তদুপুরিও উদ্যেগ নেয়নি কেউ ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারের ।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কয়েক দিন ধরে লালুয়ার চারিপাড়া বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে চারিপাড়া, পশরবুনিয়া, ধঞ্জুপাড়া ও নয়াপাড়াসহ ১২/ ১৩ টি গ্রাম প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে। এসব গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়ীতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই বাঁচার আশায় উচুঁস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট, গরু কিংবা ছাগলের মালিকদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে। অন্যদিকে মহিপুরের নিজামপুর বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ন থাকায় জোয়ারের পানির চাঁপে যেকোন মুহুর্তে ছুটে কমরপুর, সুদিরপার, পুরান মহিপুর, ইউসুবপুর ও নিজামপুর গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা করেছে স্থানীয়রা। এছাড়া ধানখালীর দেবপুর বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি তান্ডবলীলায় মত্ত।

নিজামপুর গ্রামে বাসিন্দা মো.নুরজামান হাওলাদার বলেন, ২০০৭ সালে ঘুনিঝড় সিডরের আঘাতে ভেঙে যায় নিজামপুর ও সুদিরপুরের বেরিবাঁধ। এরপর কয়েক দফা পনিউন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিত ভাবে বর্ষা মৌসুমে নির্মান কাজ করলেও তা টেকসই না হওয়ায় এ বাঁধটি ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। কৃষক ইসহাক হাওলাদার বলেন, লবন পানিতে ক্ষেত খামার তলিয়ে রয়েছে। চাষাবাদও বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে অমাবশ্যা কিংবা পূর্নিমার জোয়ারের সময়ই এসমস্যা প্রকট আকার ধারন করে।

লালুয়ার চারিপাড়া গ্রামের পানিবন্ধি আয়েশা জানান, জোয়ার-ভাটাতে পানিতে মোগো সব ডুইব্বা গ্যাছে। নদীতে পানি বাড়লেই মোগো নাওয়া-খাওয়া ঘুম হারাম হইয়া যায়। মোগো বিপদের কোন শেষ থাকে না, দুইদিন ধরে চুলায় হাড়ি দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। বিধবা আছিয়া বেগম জানান, প্রতিনিয়তই পানি বাড়ায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনী নিয়ে মাচার উপরে বসে থাকি একটু বেঁচে থাকার আশায়।

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, এ বাঁধের বিষয় নিয়ে বহুবার সংশ্লিষ্ট ও বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে, কিন্তু কিছুই হয়নি, অথচ অমাবস্যা-পূর্নিমার জোবা হলেই এ ইউনিয়নের ১২/১৩ টি গ্রামের মানুষ থাকে সবচাইতে বেশী দূর্ভোগে। লালুয়ার এসব বানভাসী মানুষের দূর্ভোগ কাটাতে তিনি স্থায়ী বাঁেধর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন বলেন, নির্মান কাজ শেষ হওয়ার এক বছর না যেতেই নিজামপুর বাঁধের ভাঙন শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এ ব্যয়বহুল বেরিবাঁধটি রক্ষা করা সম্ভব নয়। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দুই কিলোমিটার বেরিবাঁধটি পূর্ন নির্মানের জন্য মন্ত্রী, এমপি ও পনি উন্নয়ন বের্ডের দপ্তরে দৌড়ঝাপ করতে করতে করতে আমার মেয়াদ শেষের দিকে, কিন্তু কোনই সুফল পাইনি। তাই এলাকার জনগনের স্বার্থে তিনিও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কলাপাড়া উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, লালুয়া ও মহিপুরের বেরি বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রনালয় পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে জরুরী ভিক্তিতে কোন প্রকল্প দেয়া হলে অতিদ্রুত কাজ শুরু করা সম্ভব বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

 

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি