মধ্যরাতে নিজ বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা ও সাজা দেয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে। ওইদিন ঘটনাটি সরাসরি তার নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। বুধবার (২৬ আগস্ট) ঘটনার পুরো তদন্ত শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দাখিল করা প্রতিবেদনে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বলেন, গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিসি সুলতানা পারভীনের সরাসরি নির্দেশে তার অধীনস্থ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করেন। যা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওইদিন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে ডিসি অফিসে নিয়ে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এমনকি তার বাড়িতে আধা বোতল মদ এবং গাঁজা পাওয়ার মিথ্যা নাটক সাজানো হয়েছিল। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

পরবর্তীতে সরকার রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই প্রেক্ষিতে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু তাহের মো. মাসুদ রানা ঘটনার পুরো তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। পাশাপাশি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সেটি পাঠিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মার্চ কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মামলা দেয়ার নামে নির্যাতনের ঘটনায় ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাত ৩৫-৪০ জন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বাংলা ট্রিবিউনের অপরাধ বিভাগের প্রতিবেদক নুরুজ্জামান লাবু।

সেই অভিযোগে বলা হয়েছিল, ১৪ মার্চ রাত ১২টার দিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে সাংবাদিক আরিফুলের বাড়িতে ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে এবং আরিফুলকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে অজ্ঞাত কোনো এক স্থানে নিয়ে তাকে এনকাউন্টারে দেয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আরিফুলকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে ফের নির্যাতন করা হয়। ওই রাতেই মাদকের মামলা দিয়ে এক বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং রাতেই তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।