চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এ ট্রায়াল হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুমোদনের এ তথ্য জানান।

জানা গেছে, চীন উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তারা নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিনের বড় আকারে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল বাংলাদেশে করার অনুমতি চেয়েছিল। ১৯ জুলাই চীনের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। ওই দিন বিএমআরসি পরিচালক ডা. মাহমুদ-উজ-জাহান আমাদের সময়কে বলেন, আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) বাংলাদেশে চীনের একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার অনুমতি চেয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ট্রায়ালের আগে বিএমআরসির নীতিগত অনুমোদন নিতে হয়। আমরা সব কিছু পর্যালোচনা করে আইসিডিডিআরবিকে চীনের তৈরি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছি। এখন এটি বাস্তবায়ন করবে আইসিডিডিআরবি।

তিনি আরও বলেন, আইসিডিডিআরবি ঠিক করবে তারা কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপে যাবে। প্রাথমিকভাবে সাত-আটটি সরকারি কোভিড হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে পরবর্তী ধাপে ট্রায়াল শুরু করা হবে, তাদের পার্টিসিপেন্ট সিলেকশন কীভাবে হবে তা নির্ধারণ হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির তৈরি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বাংলাদেশে হবে। চীনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে ট্রায়াল করতে চায়। আইসিডিডিআরবি-কে ভ্যাকসিন দেবে। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীকেও প্রতিটি ভ্যাকসিন সম্পর্কে অবহিত করেছি। তিনি চিন্তাভাবনা করে আমাদের নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর প্রথমে সিনোভ্যাকের ট্রায়াল চালানো হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়াল ও তার অগ্রগতিসংক্রান্ত বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশের ভ্যাকসিন আসুক তার ট্রায়াল লাগে। আমাদের প্রস্তাব হলোÑ প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এবং পরে যারা স্বেচ্ছায় আসবেন, তাদের ওপর ট্রায়াল করা হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আজ ডিটেইল আলোচনা হয়েছে। অফিসিয়ালি তাদের জানিয়ে দিয়েছি আপনারা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এ ট্রায়াল কার্যক্রম চলবে। চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা চীনা সরকার এবং কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে যত তাড়াতাড়ি করা যায় তা করবেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভ্যাকসিন ট্রায়ালের যে খরচ হবে, সেটি বহনের প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছেন। আমরা ট্রায়াল করার সুযোগ দেব। কিন্তু ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পায় সেটি তাদের বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চীনের কোম্পানিটি গত কয়েক মাস ধরেই আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে ট্রায়ালের ব্যাপারে আমাদের অনুরোধ করে আসছিল। সরকার তাদের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সব ধরনের যাচাই-বাছাই করেছে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ট্রায়াল শুরু করেছে। তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশে ট্রায়াল শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ চায়না কোম্পানি পছন্দের শীর্ষে রেখেছে শুরু থেকেই। বাংলাদেশ এই ট্রায়ালে অংশ নিলে ১ লাখ পিস টিকা ফ্রি পাওয়ার পাশাপাশি আরও প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভ্যাকসিন কেনায় অগ্রাধিকার পাবে বলে সরকার মনে করছে। তা ছাড়া চীনের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক দৃঢ়। সব কিছু বিবেচনা করেই চীনের ভ্যাকসিন কোম্পানিটিকে ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অন্য কোনো দেশের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিশ্বের আটটি কোম্পানির ভ্যাকসিন ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ট্রায়ালের আগ্রহ দেখালে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করবে।

ভ্যাকসিন ক্রয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের অনুপাতে কিছু ভ্যাকসিন ফ্রি পাবে। তবে সরকার কেবল ফ্রি ভ্যাকসিন পেতেই বসে থাকবে না। সরকার ভ্যাকসিন ক্রয়ে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না। সংক্রমণের হার যেন কমে আসে সে বিষয়েও কাজ করা হবে। কারণ ভ্যাকসিন পেতে সময় লাগবে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে কোনো ভ্যাকসিন আসবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিনও এপ্রিল-মে-জুনের মধ্যে হয়তো কিছু বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ পেতে পারে।